গর্ভধারণ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে এতে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে মা ও অনাগত সন্তানের জন্য সেটা মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই এ সময় কিছু সাবধানতা জরুরি:
গর্ভাবস্থায় অন্তত চারবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। গর্ভকালীন ১৬ সপ্তাহের মধ্যে মায়ের অন্তত একবার অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, এর আগে যাওয়াও ভালো। পরে কখন যেতে হবে, চিকিৎসকের কাছে জেনে নিন।
পর্যাপ্ত খাবার খেতে হবে। শাকসবজি, ফলমূল, দুধ, ডিম খাওয়ার পাশাপাশি সারা দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করাটাও জরুরি।
হবু মায়ের পর্যাপ্ত বিশ্রামও চাই। এ সময় রাতে আট ঘণ্টা ও দুপুরে দুই ঘণ্টা বিশ্রাম প্রয়োজন।
ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক পোশাক পরতে হবে।
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস ও শেষ তিন মাস খুবই সাবধানে থাকতে হবে। এই সময় দূরে কোথাও ভ্রমণ করা ঠিক নয়। পেটে চাপ লাগতে পারে, এমন কোনো কাজই এ সময় করা যাবে না।
গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড প্রভৃতি পুষ্টি উপাদানের চাহিদা বেড়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এসব উপাদানসমৃদ্ধ ওষুধ সেবন করতে হবে। সময়মতো টিটেনাসের টিকা নিতে হবে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। শরীরের অন্যান্য অংশের পাশাপাশি স্তনের বোঁটাও পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন।
গর্ভাবস্থায় কোনো ধরনের সমস্যা হলে জরুরি ভিত্তিতে কোন চিকিৎসা কেন্দ্রে যাবেন, কীভাবে যাবেন, কোথায় প্রসব করাবেন—আগেই ভেবে রাখুন। নিজের রক্তের গ্রুপ জেনে রাখুন। জরুরি পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে রক্ত দিতে পারবেন, এমন অন্তত কয়েকজনকে প্রস্তুত রাখা ভালো। জরুরি অবস্থায় চিকিৎসা করাতে এবং চিকিৎসাকেন্দ্রে যেতে-আসতে খরচ হতে পারে, এ বিষয়টির দিকে খেয়াল রেখে কিছু সঞ্চয় করতে হবে।
গর্ভকালীন জটিলতা ছাড়াও অন্যান্য সমস্যা, যেমন কাশি, জন্ডিস, ডায়াবেটিস প্রভৃতির চিকিৎসায় অবহেলা করা যাবে না।
নিরাপদ প্রসব সম্পর্কে চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন। মা হওয়ার মানসিক প্রস্তুতিও থাকা প্রয়োজন। সন্তান জন্মের পর মায়ের করণীয় সম্পর্কে জেনে রাখুন গর্ভাবস্থায়ই। প্রসবের পরেও মায়ের পর্যাপ্ত খাবার ও বিশ্রামের প্রয়োজন। জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই সন্তানকে মায়ের দুধ দিতে হবে। এ ছাড়া সন্তানের চোখের যত্ন, টিকা দেওয়ার নিয়ম এবং প্রসবের পর জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিন।
কিছু বিপদচিহ্ন: গর্ভকালীন বিপদচিহ্ন সম্পর্কে হবু মা এবং তাঁর বাড়ির লোকদের জেনে রাখা প্রয়োজন।
প্রসবপূর্ব রক্তস্রাব ও পানি ভেঙে যাওয়া
খিঁচুনি, চোখে ঝাপসা দেখা, তীব্র মাথাব্যথা
পেটের ওপরের দিকে ব্যথা, ঘুমের অভাব, শেষ দিকে বমি বমি ভাব
গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া হ্রাস বা একেবারেই থেমে যাওয়া
শুয়ে থাকা অবস্থাতেও পায়ে জমা পানি না কমা (গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকভাবে পায়ে পানি জমলে তা বিশ্রামে কমে যায়, বিশ্রামের পরেও না কমলে বুঝতে হবে এটি স্বাভাবিক নয়)
রক্তচাপ ১৪০/৯০ মিমি পারদ কিংবা আরও বেশি থাকা
মারাত্মক রক্তস্বল্পতা ও শারীরিক দুর্বলতা;
প্রসবের আগেই নাড়ি বের হয়ে আসা কিংবা সন্তানের মাথা বের হবার আগেই হাত কিংবা পা বেরিয়ে আসা
প্রসবের ব্যথা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় পর্যন্ত স্থায়ী হওয়া
প্রসবের পর গর্ভফুল না পড়া কিংবা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়া
এসবের যেকোনোটি দেখা দিলে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিয়ে আসুন। সকল মা ও নবজাতক ভাল থাকুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ডা. ফাহমিদাতুলি
স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল