শিল্পী সারাহ ওয়াকার বলেছিলেন, মা হওয়াটা একই বাড়িতে নতুন একটি কক্ষ খুঁজে পাওয়ার মতো। সন্তান জন্মের পর তার এমনই মনে হয়েছিল। পৃথিবীর সব নারী যখন মা হয়, তখন তাদের এমন কিছু অভিজ্ঞতা হয় যার বর্ণনা দেওয়া দুষ্কর।
এর পেছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে। গর্ভাবস্থায় দৈহিক পরিবর্তনে মস্তিষ্কে পরিবর্তন ঘটে এবং চিন্তা-চেতনার বদল ঘটে। আর এ অনুযায়ী আচার-ব্যবহার বদলে যেতে থাকে।
বিজ্ঞান বলে, এ সময় মস্তিষ্কের গ্রে ম্যাটারে পরিবর্তন ঘটে। গর্ভাবস্থায় নারীর গোটা দেহে হরমোনের বন্যা বয়ে যায়। এ অবস্থায় তৈরি হয় মাতৃত্ববোধ। তার মাঝে ভালোবাসা, সন্তানের নিরাপত্তা দান এবং অন্যান্য নানা বিষয় মস্তিষ্কে ভীড় করতে থাকে। এ কারণেই নতুন মায়েরা বিষণ্নতা বা দুশ্চিন্তাটা খুব গভীরভাবে উপলব্ধি করেন বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। সন্তানের কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা, তার ক্ষুধা লাগলো কিনা এবং সে সুস্থ আছে কিনা ইত্যাদি নানা বিষয় মাথাচাড়া দেয়।
তাই নারীর মাতৃত্বের আচরণ তার অন্যান্য আচরণ থেকে ভিন্ন ধাঁচের হয়ে থাকে। এর সঙ্গে 'অবসেসিভ-কম্পালসিভ বিহেভিয়ারস' এর বিষয়টি সরাসরি যুক্ত। এসব কারণে সন্তান জন্মের পর পরই শুধু মানুষ নয়, প্রাণীদের মাঝেও সন্তানের প্রতি ব্যাপক দেখাশোনার স্বভাব গড়ে ওঠে।
মস্তিষ্কে আলমন্ড আকৃতির নিউরন দেখা গেছে যার নাম অ্যামাইগডালা। এটি স্মৃতি এবং আবেগের মাঝে সংযোগ ঘটিয়ে ভয়, চিন্তা এবং ক্ষোভের মতো আচরণ প্রকাশে কাজ করে। দেখা গেছে, সন্তান জন্মের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অ্যামাইগডালা অংশটি বেড়ে ওঠে।
বিজ্ঞানীরা কয়েকটি গবেষণায় দেখেছেন, মায়ের মস্তিষ্কে অন্য নারীর মস্তিষ্ক থেকে কিছুটা ভিন্নভাবে কাজ করে। এই পরিবর্তনের প্রভাবে যে আচরণ দাঁড়ায়, তার মাধ্যমেই মা সন্তানের সঙ্গে কথা বলেন এবং তার যাবতীয় দেখভাল করেন।
২০০৪ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, অ্যামাইগডালা অংশটিই মা ও সন্তানের মাঝে দৃঢ় বন্ধন গড়ে তুলতে সহায়তা করে। একটি শিশুর কাছে তার মা এবং অন্য নারীর মাঝে ভিন্নতা এনে দিতে অনেকটা অ্যামাইগডালা অংশ কাজ করে।
গবেষণায় প্রমাণ মেলে, মা ও শিশুর সম্পর্কে মায়ের অ্যামাইগডালা অংশ যত বেশি কাজ করবে, তার মাঝে দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা ইত্যাদি তত বেশি কম থাকবে।
মায়ের অ্যামাইগডালা অংশে যেভাবে হরমোন প্রবাহিত হবে, সেভাবেই তার কাজ চলতে থাকবে। এই স্থানে গর্ভাবস্থায় অক্সিটোসিন হরমোন কাজ করতে থাকে।
বিজ্ঞানীরা জানান, নারীর প্রথম সন্তানের পর মস্তিষ্কে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটা ঘটে থাকে। মূলত নারীদের হরমোন-কেন্দ্রিক প্রভাবে পরিচালিত হবে মস্তিষ্ক।
REF:DKK
©2014 Copyright by Micron Techno. All rights reserved.