যক্ষা বা ক্ষয়রোগ হচ্ছে সংক্রামক রোগ। এই উপমহাদেশে এ রোগের ইতিহাস প্রায় ২ হাজার বছরের পুরনো। যে কোনো দেশের যে কোনো মানুষ যে কোনো সময়, যে কোনো বয়সে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সব বয়সের মানুষের এ রোগ হলেও সমীক্ষায় দেখা গেছে মোটামুটি ১৪-৩০ বছরের বয়সের যুবক-যুবতীরাই এ রোগে বেশী আক্রান্ত হয়। বিশ্বে যত লোক বছরে মারা যায় তার প্রায় ৭ ভাগ এ রোগে মারা যায়।
বর্তমানে পৃথিবীতে ২০ থেকে ২৪ মিলিয়ন সংক্রামক যক্ষারোগী রয়েছে। এদের মধ্যে প্রতি ঘণ্টায় ১২ জন রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। বাংলাদেশেও যক্ষা পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। প্রায় প্রতি ২৫ জনে ১ জন এ রোগে আক্রান্ত। এদের মধ্যে ৩.৫ লাখ সংক্রামক যক্ষা রোগী। সংক্রামক রোগীদের কফের সংগে সব সময় জীবাণু বের হয় এবং তার দ্বারা এ রোগ ব্যাপ্তি লাভ করে। দেহের বিভিন্ন অঙ্গে এ রোগ হতে পারে। মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলসিস নামক অতিসুক্ষ্ম জীবাণুর কারণে যক্ষা রোগ হয়।
এই জীবাণু সাধারণত শ্বাসনালী অথবা পরিপাকনালী দিয়ে দেহে প্রবেশ করে। সক্রিয় এবং ওপেন টি.বি. রোগীর হাঁচি-কাশি থেকে অসংখ্য জীবাণু নির্গত হয়ে বাতাসে ভেসে বেড়ায় এবং তা সুস্থ লোকের নিঃশ্বাসের সাথে দেহে ঢুকে পড়ে। এই সব রোগীর সঙ্গে ঘনিষ্ট মোলামেশা করলে এবং তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র ব্যবহার করলেও সংক্রমণ ঘটতে পারে।
যক্ষা অত্যন্ত সংক্রামক তবে সব যক্ষা রোগী থেকে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি নেই। যাদের কাছ থেকে যক্ষা রোগ ছড়াতে পারে, তাদের বলা হয় ‘ওপেন কেস’। এই সব রোগীর কফ পরীক্ষায় যক্ষার জীবাণু পাওয়া যায়। এদের কফ থেকে সব সময়ই জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে, তাই এদের সঙ্গে চলাফেরা করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। রোগীর অন্য কোনো জিনিস যেমন- থালা, গ্লাস এবং কাপড়-চোপড়ের মাধ্যমে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি খুব কম। যে বাড়িতে ওপেন কেসের যক্ষা রোগী আছে সে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের অসতর্কতায় এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে।
যে সমস্ত রোগীর কফে বারবার পরীক্ষার পরও জীবাণু পাওয়া যায় না তাদের সঙ্গে সুস্থ লোক চলাফেরা করলেও রোগাক্রান্ত হওয়ার ভয় নেই। তবু যক্ষা রোগী থেকে সতর্ক থাকা ভালো কারণ অসংক্রামক যক্ষা রোগীও হঠাৎ করে ওপেন কেসে পরিণত হয়ে মারাত্মক বিপদ ঘটাতে পারে।
যক্ষা রোগী হাঁচি বা কাশি দিলে ১৮ ফুট জায়গার মধ্যে সঙ্গে সঙ্গে জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই সুস্থ মানুষের সব সময় নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করা উচিত। ওপেন যক্ষা রোগীর সান্নিধ্যে গেলে বা ব্যবহৃত জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করলে মুখে মাস্ক বা রুমাল বেঁধে নেওয়া উচিত। এতে জীবাণু নিঃশ্বাসের সাথে দেহে প্রবেশ করার সুযোগ পায় না।
অনেক সময় যক্ষার জীবাণু শুধুমাত্র লিম্ফগ্ল্যান্ড বা লসিকা গ্রন্থি আক্রান্ত করে। হাড়, কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গেও যক্ষা হতে পারে। এ ধরনের যক্ষার কোনোটাই ছোঁয়াচে নয়। ফলে অন্যরা আক্রান্ত হওয়ার ভয় নেই। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, সব যক্ষাই সঠিক সময়ের চিকিৎসায় ভালো হয়। আর যক্ষা হলেই আতঙ্কিত হয়ে দূরে থাকার দরকার নেই। তার আগে জেনে নিতে হবে সেই যক্ষা ছোঁয়াচে কি না?