ডায়াবেটিস জয় করার পথে বড় পদক্ষেপ
টাইপ-১ ডায়াবেটিস শিশু এবং অল্প বয়সের মানুষ যখন ডায়াবেটিসে ভোগে তাকে বলা হয় । এই রোগের কারণ হলো প্যানক্রিয়াসে ইনসুলিন তৈরি করে যেসব কোষ, সেগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার ফলে। এসব কোষকে বলা হয় বিটা কোষ। রোগীর শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুলক্রমে নিজের বিটা কোষ নিজেই ধ্বংস করে বলে এই ডায়াবেটিস হয়। গত অক্টোবরে ঘোষণা এসেছে বিজ্ঞানীরা এখন ল্যাবরেটরিতে নতুন ভালো বিটা কোষ তৈরি করতে পারছেন যা দিয়ে নষ্ট বিটা কোষকে প্রতিস্থাপন করা যাবে এবং টাইপ-১ ডায়াবেটিসও সারানো যাবে। এখন এই নতুন বিটা কোষগুলো যেন নিরাপদে দেহ গ্রহণ করতে পারে, প্রত্যাখ্যান না করে, সে রকম একটি উপায় বের করতে পারলে এরকম ডায়াবেটিস পুরোপুরি সারানো সম্ভব হবে।
স্টেম কোষ থেকে প্যানক্রিয়াস প্রতিস্থাপনের জন্য নতুন বিটা কোষগুলো তৈরি হয়েছে
স্টেম কোষ হলো শরীরের কোনো বিশেষ অঙ্গের বিশেষ কোষ হিসেবে বিশেষায়িত হওয়ার আগে কোষের যে অবস্থা থাকে তা। অর্থাৎ একটি স্টেম কোষ তখনো চামড়ার কোষ বা স্নায়ুর কোষ বা বিটা কোষ বা এরকম অন্য কোনো বিশেষ কোষ হয়ে ওঠেনি- পরে এগুলোর যে কোনো একটি হয়ে উঠতে পারে। এর উৎস সাধারণত মানব-ভ্রূণের একেবারে প্রথমদিকের অবস্থার মধ্যে যখন মূল একটি কোষ থেকে বিভাজিত হতে দুটি চারটি কোষের প্রথম ভ্রূণ গঠিত হচ্ছে, যা নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এখনো বিশেষায়িত হয়নি। এগুলোকে বলা হয় ভ্রূণ স্টেম কোষ। শিশুতে পরিণত না হওয়া পরিত্যক্ত ভ্রূণ থেকে স্টেম কোষ নেওয়া হয় বলে এর বিরুদ্ধে একটি অনীহা কাজ করত। বর্তমানে অবশ্য সাধারণ কোষকে তার বিশেষ ভূমিকা মুছে দিয়ে স্টেম কোষে পরিণত করার উপায় উদ্ভাবিত হয়েছে।
বিটা কোষ তৈরিতে বিজ্ঞানীরা খুবই ধৈর্য ও মনোযোগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছেন স্বাভাবিকভাবে দেহে স্টেম কোষ থেকে বিটা কোষ তৈরি হওয়ার সময় কোষের ডিএনএর মধ্যে কোনো জিনের কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যায়, কোনোটির জিন কার্যকর হয়- যাকে জিনের সুইচ অফ করা বা অন করা বলা যেতে পারে। শরীরের সব কোষে সব গুণাগুণের জন্য সব জিনই সমানভাবে থাকে।
বিশেষ বিশেষ অঙ্গে কোনো জিনের সুইচ অফ থাকে আবার কোনো জিনের সুইচ অন থাকে বলেই সেগুলো সেই অঙ্গের জন্য বিশেষায়িত হয়। বিজ্ঞানীরা বিটা কোষের ক্ষেত্রে এই অন-অফ হওয়ার বিষয়গুলো বিস্তারিত জানতে পেরেছেন প্রথমে ব্যাঙ ও ইঁদুরের ওপর গবেষণা করে এবং পরে মানুষের কোষের ওপর। এই অন-অফ করার জন্য বিশেষ বিশেষ প্রভাবক বস্তু ব্যবহার করতে হয়।
গত বছরের সাফল্যটি এসেছে বিটা কোষ তৈরিতে এই প্রভাবকগুলো ঠিকঠাকভাবে নিরূপণ করতে পারার মাধ্যমে। ব্যাপারটি এত সফলভাবে নিয়মিত করা যাচ্ছে যে রোগীর শরীরে দেওয়ার মতো প্রচুর পরিমাণ বিটা কোষ এভাবে সৃষ্টি সম্ভব হচ্ছে।
ref:DAb