ওষুধ প্রয়োগ কিংবা রোগ-শোকের ক্ষেত্রে কিছু অবহেলা বা ভুল ধারণা রয়েছে আমাদের। অনেকে না জেনেই কিছু ভুল করে থাকি, যা পরবর্তীতে শরীরে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কিডনি রোগ নিয়ে এমন কিছু বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক এম হারুন আর রশিদ
প্রশ্ন ১ : সমস্যা না হলেও কি কিডনির পরীক্ষাগুলো করাতে হয়?
আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই কিডনি রোগে আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত কিডনির কার্যকারিতা জানতে কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন না। এমনও দেখা গেছে, কারো সারা জীবনে একবারও এই পরীক্ষাগুলো করা হয়নি। অথচ কিডনি রোগের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো—বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। আর যখন লক্ষণ প্রকাশ পায়, তখন কিছু করার থাকে না। সাধারণত পাঁচ স্তরের কিডনি রোগ হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরে শনাক্ত হলে এবং সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করালে রোগী সম্পূর্ণ নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তৃতীয় ও চতুর্থ স্তরের দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ চিকিৎসায় নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তবে চিকিৎসা দিয়ে কয়েক বছর ঠেকিয়ে রাখা যায়। আর পঞ্চম স্তর বা এন্ড স্টেজ কিডনি ফেইলিওর হলে আমরা কিছুই করতে পারি না। এ সময় রোগীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ডায়ালিসিস অথবা কিডনি সংযোজনের প্রয়োজন হয়।
পরামর্শ : যাদের বয়স চল্লিশের অধিক, যারা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে এবং যাদের পরিবারের আত্মীয়স্বজন কোনো না কোন কিডনি রোগে আক্রান্ত তাদের অন্তত তিন-ছয় মাস পর পর অথবা বছরে একবার কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। এর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা হচ্ছে রক্তের সিরাম ক্রিয়েটিনিন মাপা এবং প্রস্র্রাব পরীক্ষা করে তাতে অ্যালবুমিন, সুগার, প্রস্রাবে লোহিত অথবা শ্বেতকণিকা যাচ্ছে কি না তা দেখে নেওয়া। সাধারণত সিরাম ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায় কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না। প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় প্রস্রাবের সঙ্গে কোনো মাইক্রো অ্যালবুমিন, অ্যালবুমিন, সুগার এবং রক্তের কণিকা যাচ্ছে কি না। প্রস্রাবের সঙ্গে ৩০-৩০০ মিলিগ্রামের মধ্যে অ্যালবুমিন নির্গত হলে তাকে মাইক্রো অ্যালবুমিন বলে। আর তিন শর অধিক অ্যালবুমিন গেলে তাকে প্রোটিন ইউরিয়া ধরা হয়। যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ অথবা কিডনির অন্য কোনো রোগ রয়েছে তাদের প্রস্রাবে মাইক্রো অ্যালবুমিন ও অ্যালবুমিন নির্গত হওয়া একটি খারাপ বার্তা বহন করে এবং পরবর্তী পর্যায়ে কিডনির কার্যকারিতা বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস না থাকলে এবং প্রস্র্রাবে অ্যালবুমিন নির্গত হলে সে ক্ষেত্রে আলট্রাসনোগ্রাম করে কিডনি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় বা ছোট কি না অথবা অনেক সিস্ট আছে কি না তা দেখে নিতে হয়।
প্রশ্ন ২ : ব্যথানাশক বা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রয়োগের আগে কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করাটা কতটুকু জরুরি?
কিডনি সামান্যতম বিকল থাকলেও ওষুধ সেবনে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কারো কিডনিতে কোনো সমস্যা রয়েছে কি না-এটা না জেনেই অনেকে হরদম ব্যথানাশক ওষুধ এবং অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে থাকেন। অথচ কিডনির কার্যকারিতা ঠিক না থাকলে এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বৃদ্ধির পাশাপাশি কিডনির কার্যকারিতাকে আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে।
পরামর্শ : নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক বা ব্যথানাশক ওষুধ প্রয়োগ করার আগে কিডনির কার্যকারিতা অবশ্যই দেখে নেওয়া উচিত। চিকিৎসকরা রক্তের ক্রিয়েটিনিন দেখে প্রেসক্রিপশন করলে একিউট কিডনি অকেজো রোগ থেকে অনেকেই রেহাই পেতে পারেন।
প্রশ্ন ৩ : কিডনি ভালো রাখতে কি প্রচুর পানি পান করতে হয়?
একজন মানুষের দৈনিক কতটুকু পানি খেতে হবে এটা নির্ভর করে তার কাজের ধরন, দেহের আকার, পরিবেশ, আবহাওয়া ইত্যাদির ওপর। অনেকের ধারণা, পানি বেশি খেলেই হয়তো কিডনি ভালো থাকে। এ ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয় এবং এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও নেই। তবে কারোর কিডনির অসুখ বা বিকল থাকলে সে ক্ষেত্রে তাকে ২৪ ঘণ্টা পানি পানের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। নচেৎ বেশি পানি পানে হৃদপিণ্ডের সমস্যা হতে পারে অথবা শরীরে পানি জমতে পারে। সাধারণত শরীরে পানি জমা থাকলে পানি এক লিটারের অধিক খাওয়া উচিত নয় এবং কিডনি সম্পূর্ণ বিকল থাকলে পানি পানে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
পরামর্শ : একজন প্রাপ্তবয়সস্ক সুস্থ মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে দুই-তিন লিটার পানি পান করা উচিত। তবে অতিরিক্ত গরম পড়লে বা বেশি ঘাম নির্গত হলে পানি পানের পরিমাণ হেরফের হয়। আবার কারো কিডনি যদি বিকল থাকে বা সমস্যা থাকে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে বেঁধে দেওয়া নিয়মে পানি পান করা উচিত।
©2014 Copyright by Micron Techno. All rights reserved.