গ্রীষ্মের শুরু থেকেই ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে দেখা দিয়েছে চিকুনগুনিয়া। অতি অল্প সময়ে অধিকসংখ্যক মানুষকে একই সঙ্গে আক্রান্ত করতে পারা এই ভাইরাসের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। জ্বর, র্যাশের সঙ্গে প্রচণ্ড গিরাব্যথা ও পেশিব্যথার কারণে এ রোগের আরেক নাম ল্যাংড়া জ্বর।
কিন্তু জ্বর ও প্রাথমিক উপসর্গ সেরে যাওয়ার পরও বেশ কিছুদিন পর্যন্ত এই গিরাব্যথার স্থায়িত্ব, কখনো কখনো সম্পূর্ণ সেরে যাওয়ার পর আবার নতুন করে গিরা ফোলা বা ব্যথা দেখা দেওয়ায় ঘাবড়ে যাচ্ছেন অনেকে। কেউ ভাবছেন এটা নতুন কোনো অসুখ, আবার ছুটছেন চিকিৎসকের কাছে। কেউ ভাবছেন চিকুনগুনিয়া হয়তো সন্ধি হাড় একেবারেই নষ্ট করে দিল।
এমনিতে ভাইরাসজনিত রোগে ব্যথানাশক ব্যবহার করা প্রায় নিষেধ, কিন্তু এই প্রচণ্ড ব্যথা-বেদনা সামাল দেবেন কীভাবে? আর জ্বর সেরে যাওয়ার পনেরো দিন, এক মাস এমনকি তার বেশি সময় পর্যন্ত ব্যথা-বেদনা না সারা কি অন্য কোনো রোগ বা বাতের লক্ষণ?
চিকুনগুনিয়াজনিত ব্যথা-বেদনার উপসর্গগুলোকে স্থায়িত্বের ওপর নির্ভর করে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। তাৎক্ষণিক, মাঝারি মেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি।
তাৎক্ষণিক: জ্বরের শুরু থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত যদি ব্যথা স্থায়ী হয় তবে তা তাৎক্ষণিক বা একিউট বলা যায়। বেশির ভাগ রোগীরই এ সময়ের মধ্যে সেরে ওঠার কথা। এ সময় সাধারণ প্যারাসিটামল বা ট্রামাডলজাতীয় ওষুধ দিয়ে এই ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। জ্বর থাকা অবস্থায় ব্যথানাশক বা স্টেরয়েড পরিহার করতে হবে।
মাঝারিমেয়াদি: কারও কারও ব্যথা-বেদনা জ্বরের শুরু থেকে ৩ সপ্তাহের বেশি, এমনকি ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হচ্ছে। এ সময় ব্যথানাশকের পাশাপাশি প্রয়োজনে স্টেরয়েড ব্যবহার করা যাবে। দীর্ঘমেয়াদি: খুব অল্পসংখ্যক ব্যক্তির ব্যথা তিন মাসের অধিক সময় পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এ পর্যায়ে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, স্পনডাইলো আর্থ্রাইটিস, লুপাস ইত্যাদি রোগের পরীক্ষা করতে হবে। তারপর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী বাত নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ সেবন করতে হবে।
জ্বর ও প্রাথমিক উপসর্গগুলো পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে সেরে গেলেও চিকুনগুনিয়াজনিত বাতব্যথা আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর একটি দীর্ঘমেয়াদি চাপ ফেলতে যাচ্ছে। ইতিপূর্বে ভারতসহ
অন্যান্য দেশে গবেষণায় দেখা গেছে যে এ রোগ দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রচুরসংখ্যক ব্যক্তিকে প্রায় শয্যাশায়ী ও কর্মে অক্ষম করে দিয়েছিল। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। মশাবাহিত এ রোগের চিকিৎসা থেকে প্রতিরোধই শ্রেয়।
ডা. রওশনআরা
মেডিসিন ও বাতব্যথা বিশেষজ্ঞ
গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল