ধন্বন্তরি শব্দের একটা অর্থ হলো আরোগ্য করার অব্যর্থ ওষুধ। সবুজ চা সেই অর্থে ধন্বন্তরিরও বেশি কিছু। এ কথা মোটেও বাড়িয়ে বলা নয়। পানীয়টির গুণাগুণ যাঁদের জানা আছে, তাঁরা এ বিষয়ে একমত হবেন। সে কারণেই সবুজ চাকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর পানীয়। এতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও উপকারী পুষ্টি উপাদান রয়েছে; যা একই সঙ্গে শরীর নিরোগ রাখে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, ক্যানসার প্রতিরোধ করে ও ওজন কমায়। কেবল এখানেই শেষ নয়, দীর্ঘদিন সবুজ চা পান করলে আপনি পাবেন দীর্ঘ জীবন। একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক সবুজ চায়ের উপকারী দিকগুলোর ওপর।
রোগ প্রতিরোধে: সবুজ চায়ে রয়েছে এমন কিছু সক্রিয় জৈব উপাদান, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে ও শরীর সুস্থ রাখে। এসবের মধ্যে অন্যতম হলো ফ্ল্যাভোনয়েডস ও ক্যাটেচিনসের মতো পলিফেনলস–জাতীয় যৌগ। সেসব আসলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। আমরা সবাই জানি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুবই উপকারী উপাদান। কিন্তু এটি কীভাবে কাজ করে, তা অনেকের জানা নেই। আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত মুক্ত কণিকা বা ফ্রি রেডিক্যালের জন্ম হচ্ছে। এই ফ্রি রেডিক্যালগুলো শরীরের কোষ ধ্বংস করে, শরীরকে বার্ধক্যের দিকে নিয়ে যায় এবং নানা রোগ ডেকে আনে। পলিফেনলস এসব ফ্রি রেডিক্যাল ধ্বংস করে দেয়। এ ছাড়া সবুজ চায়ে এপিগ্যালোক্যাটাচিন গ্যালেট (ইজিসিজি) নামের একটি রাসায়নিক রয়েছে, যা দিয়ে অনেক রোগের চিকিৎসাও হচ্ছে।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়: সবুজ চায়ে থাকা ক্যাফেইন ও অ্যামাইনো অ্যাসিড ক্লান্তি দূর করে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় ও দুশ্চিন্তা দূর করে। এতে থাকা ক্যাফেইন মস্তিষ্কে ডোপামিন ও নরএপিনেফ্রিন বাড়ায়। ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ে ও মন ভালো থাকে। এ ছাড়া সবুজ চায়ে থাকা ‘এল-থিয়ানিন’ নামের অ্যামাইনো অ্যাসিড দুশ্চিন্তা দূর করতে বড় ভূমিকা রাখে।
মেদ কমায়: বিপাক ক্রিয়া বা মেটাবলিজম মন্থর হলে শরীর মেদ সঞ্চয় করে। বিপাক ক্রিয়া বাড়িয়ে মেদ কমাতে সাহায্য করে যেসব উপাদান, তার মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর সবুজ চা। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ জন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে নিয়মিত সবুজ চা পান করানোর পর তাঁদের বিপাক ক্রিয়া বেড়েছে ৪ শতাংশ। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, সবুজ চা পান করলে ১৭ শতাংশ চর্বি বিপাক বাড়ে।
ক্যানসার প্রতিরোধে: সবুজ চা ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। শরীরে জারণ ক্রিয়া বেড়ে গেলে ক্যানসার কোষ তৈরি হয়। সবুজ চা জারণ ক্রিয়ায় বাধাদান করে ক্যানসার প্রতিরোধ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, সবুজ চা পানে স্তনের ক্যানসারের ঝুঁকি ২২ শতাংশ কম, প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি ৪৮ শতাংশ এবং কোলোরেকটাল ক্যানসারের ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ কমায়।
এ ছাড়া সবুজ চা মস্তিষ্কের আলঝেইমার রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে বলেও গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। পাশাপাশি এটি কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে, টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে, মুটিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে ও আয়ু বাড়ায়।