আমরা যে শর্করাজাতীয় খাবার খাই সেটা বিপাক প্রক্রিয়ায় ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হয়, যা কাজে শক্তি জোগায়। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা বজায় রাখতে গ্লুকোজের প্রয়োজন। কোনো কারণে প্রয়োজনীয় মাত্রার চেয়েও গ্লুকোজ কমে গেলে (সাধারণত ৩ মিমি/লি.র নিচে) তখন নানা উপসর্গ দেখা দেয়। এই অবস্থাটাকেই হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে। এ সময় দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। উপসর্গ: প্রাথমিক পর্যায়ে দুর্বল লাগা, বুক ধড়ফড় করা, বেশি ক্ষুধা লাগা, মাথা ঝিম ঝিম করা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া ইত্যাদি। আস্তে আস্তে শরীরে ঘাম দেখা দেয়, ঝাঁকুনি হয়, বমি বমি ভাব হয়, ঘুম ঘুম লাগে। একপর্যায়ে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। তবে সব ক্ষেত্রে উপসর্গ থাকে না।
কারণ: খুব ক্ষুধা পাওয়ার পরও খাবার না খাওয়া কিংবা উপোস থাকা
প্রয়োজনের অতিরিক্ত ডায়াবেটিসের ওষুধ কিংবা ইনসুলিন গ্রহণ
হঠাৎ অতিরিক্ত পরিশ্রম
অ্যালকোহল সেবন
ক্যান্সার হলে বা মারাত্মক ইনফেকশন হলে
কিডনি বা লিভার ফেইলিওর হলে।
চিকিৎসাওকরণীয়: হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য করণীয়—
প্রথমেই আক্রান্ত ব্যক্তির মাথা একটু নিচুতে রেখে আরামদায়ক জায়গায় শুইয়ে দিন
রোগীকে আশ্বস্ত করুন যেন তিনি ঘাবড়ে না যান
দ্রুত গ্লুকোজ বা চিনি গুলিয়ে খাইয়ে দিন। হাতের কাছে গ্লুকোজ বা চিনি না থাকলে মিষ্টি কোনো ফলের জুস, চকোলেট বা মিষ্টিজাতীয় কোনো তরল খাবার খাওয়ান
অজ্ঞান হয়ে গেলে অথবা মুখে খাওয়ানো সম্ভব না হলে দ্রুত হাসপাতালে নিন।
প্রতিরোধ:
সতর্কতার সঙ্গে ইনসুলিন ব্যবহার করা
নিয়মিত ব্লাড সুগার চেক করুন
কোনো বেলার খাবার যেন বাদ না পড়ে
ইনসুলিন নেওয়ার পর খাবার খেতে যেন দেরি না হয়
মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকুন
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অভুক্ত থাকা নয়
অতিরিক্ত ব্যায়াম বা কায়িক শ্রম নয়
দু-একবার হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অন্য কোনো রোগ আছে কি না তাও জেনে নিন।
ডা. গুলজারহোসেনউজ্জ্বল
রেসিডেন্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)।