স্বাস্থ্য বার্তা

প্রশ্নোত্তরে চিকুনগুনিয়া: বয়স্ক রোগীদের থাকতে হবে বিশেষ সতর্ক

রাজধানীতে ঘরে ঘরে এখন চিকুনগুনিয়া। হঠাৎ করে এ রোগের প্রকোপ এত বেড়ে গেছে যে মানুষের মধ্যে রীতিমতো আতঙ্ক বিরাজ করছে। এক পরিবারের কারো হলে অন্য সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। চিকুনগুনিয়া হলে কী করতে হবে? জ্বর সেরে যাওয়ার পরই বা করণীয় কী? জ্বরের লং টার্ম ইফেক্টই বা কী? এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন বিস্তারিত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আতাউর রহমান কাবুল

প্রশ্ন : চিকুনগুনিয়া কেন হয়?
উত্তর : মূলত এডিস প্রজাতির এডিস ইজিপ্টি ও এডিস এলবোপিকটাস মশা থেকেই চিকুনগুনিয়া রোগের সংক্রমণ ঘটে। এটি টোগা ভাইরাস গোত্রের। মশাবাহিত হওয়ার কারণে একে আরবো ভাইরাসও বলে। ডেঙ্গু ও জিকা ভাইরাসও এই মশার মাধ্যমে ছড়ায়, যার লক্ষণ প্রায় একই রকম। ভাইরাসের বাহক এডিস মশা কামড়ালে আশি ভাগ লোকেরই চিকুনগুনিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

প্রশ্ন : কারো চিকুনগুনিয়া হয়েছে এটা নির্দিষ্টভাবে বোঝার উপায় কী?
উত্তর : গা কাঁপিয়ে জ্বর আসবে, যা ১০২ ডিগ্রি বা তারও বেশি হতে পারে। হাত বা পায়ের আঙুল, মেরুদণ্ড বা অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথার সঙ্গে তা ফুলেও যেতে পারে। জ্বরে অচেতন হতে পারে কেউ কেউ। তা ছাড়া বমি বমি ভাব বা বমি, শরীর খুবই দুর্বল ও পানিশূন্য হয়, গলা-মুখ শুকিয়ে পানির পিপাসা পায়। হাত-পায়ে লাল লাল র‍্যাশ হতে পারে। তীব্র ব্যথায় পা ফেলা কঠিন হয়ে যায়। জ্বর সেরে যাওয়ার পরও শরীরে ব্যথা থাকতে পারে। এসব লক্ষণ থাকলে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত করে সাপোর্টিভ চিকিৎসা দেওয়া হয়।

প্রশ্ন : একদম সহজ করে বললে এর চিকিৎসা কী?
উত্তর : অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের মতোই এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা আপাতত নেই। এই জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলেই শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়াতে হবে। প্রতি বেলা একটি বা দুটি ট্যাবলেট তিনবেলা খেতে দিতে হবে। এ সময় রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে। জ্বর বেশি হলে পানি দিয়ে শরীর মুছিয়ে দিতে (স্পঞ্জ করে) হবে অথবা সাপোজিটরি দিতে হবে। পাশাপাশি ঘনঘন খেতে দিতে হবে প্রচুর পরিমাণ পানি, ডাবের পানি, সরবত, গ্লুকোজ, স্যালাইন, স্যুপ জাতীয় তরল ইত্যাদি। এ সময় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না। তিন বা চার দিনের বেশি জ্বর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষা করে চিকিৎসা নিতে হবে।

প্রশ্ন : চিকুনগুনিয়া হলে কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে বা হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে?
উত্তর : চিকুনগুনিয়া জ্বর হলে বাড়িতেই চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। যেহেতু এই রোগের নির্ধারিত কোনো চিকিৎসা নেই, তাই জ্বরের জন্য সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়। দেখা গেছে, জ্বর ভালো হলেই অন্যান্য উপসর্গও ভালো হয়ে যায়। তবে অনেকের অবস্থা একটু বেশি খারাপ হতে পারে। অনেকের শরীরে বেশি পরিমাণ র‍্যাশ ওঠে, অস্থিসন্ধির ব্যথাও তীব্র থাকে, প্রেশার দ্রুত ওঠানামা করে, প্রস্রাব অনেক কমে যায়, শরীরের কোথাও হঠাৎ রক্তপাত হতে পারে, মস্তিষ্কে সংক্রমণ হতে পারে। এসব লক্ষণ থাকলে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া ভালো। ভর্তি হলেও দু-তিন দিনের মাথায় তারা রিলিজ নিয়ে বাসায় চলে যেতে পারেন।

প্রশ্ন: বয়স্কদের ক্ষেত্রে কি বিশেষ কোনো সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে?
উত্তর : হ্যাঁ। বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে চিকুনগুনিয়ার যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে। বয়স্কদের মধ্যে যাঁদের ক্রনিক রোগ রয়েছে বিশেষ করে ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, হৃদরোগ, ক্যান্সার, হাঁপানি ইত্যাদি তাঁদের চিকুনগুনিয়া হলে তাঁরাই মূলত হাই রিস্কের মধ্যে থাকেন। বয়োবৃদ্ধ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ও সহ্য করার ক্ষমতা অনেক কম। এই বয়সে এসে চিকুনগুনিয়ার মতো জ্বর হলে গিরায় গিরায় যে প্রচণ্ড ব্যথা হয়, তার ধকল তাঁরা সইতে পারেন না। যদিও তাঁদের জন্য আলাদা চিকিৎসা নেই, তার পরও পরামর্শ হলো, বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ দেখা মাত্রই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত এবং প্রয়োজনে কয়েক দিনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করে রাখা উচিত। তাঁরা যেন শুধু শুধু প্যারাসিটামল খেয়ে ঘরে শুয়ে না থাকেন।

প্রশ্ন: জ্বর সেরে গেলেও শরীরে কত দিন পর্যন্ত চিকুনগুনিয়ার বাহক বা জীবাণু বিদ্যমান থাকে, যা অন্যদের জন্য বিপজ্জনক?
উত্তর : চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস সাধাণরত এক সপ্তাহ পর্যন্ত শরীরে বিদ্যমান থাকে। এই সময় এডিস মশা রোগীকে কামড় দিলে সেই মশার মাধ্যমে অন্যরাও আক্রান্ত হতে পারে। অর্থাৎ সংক্রমিত মশা থেকে অন্যদের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন : চিকুনগুনিয়ার লংটার্ম ইফেক্ট কী?
উত্তর : ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের সাধারণত দীর্ঘ সময় শরীর ব্যথা বা অন্য কোনো সমস্যা থাকে না। জ্বর ভালো হয়ে গেলে কয়েক দিন দুর্বলতা বা ক্লান্তি থাকতে পারে। কিন্তু চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের জ্বর সেরে গেলেও ব্যথা থাকতে পারে দীর্ঘ সময়। আক্রান্তদের অনেকেই দীর্ঘদিনের জন্য স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বেশির ভাগ রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করলেও অনেকের কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পর্যন্ত জয়েন্টের ব্যথা থাকে। এতে অবশ্য ভয়ের কিছু নেই। আরো কিছুদিন চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়।

প্রশ্ন : চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যুঝুঁকি নেইকথাটি কতটুকু সত্য?
উত্তর : চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যুঝুঁকি নেই এটিই সত্য। প্রায় সব ক্ষেত্রে এই রোগ থেকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম মানব ইমিউন সিস্টেম। তবে উপসর্গগুলো দূর হওয়ার জন্য কিছুটা সময় লাগতে পারে, বিশেষ করে জয়েন্টের ব্যথা। তবে পরিসংখ্যান বলছে, বয়স্ক ও শিশুদের ঝুঁকি সামান্য রয়েছে, যাতে হাজারে একজনের মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রশ্ন : ব্যাকটেরিয়াল জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিক লাগে অথচ চিকুনগুনিয়া বা ডেঙ্গু হলে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যাসপিরিন, NSAID জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয় না, শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করে পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকতে বলা হচ্ছে। কিন্তু এই যে হাজার হাজার লোক চিকুনগুনিয়ার চিকিৎসা নিচ্ছেন তাতে কি ব্যাকটেরিয়াল জ্বরের রোগীরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে?
উত্তর : এখনকার সব জ্বরই যে চিকুনগুনিয়া তা বলা যাবে না। এই সময় ডেঙ্গু বা অন্যান্য ভাইরাল জ্বরের রোগীও পাওয়া যাচ্ছে। তবে ভাইরাল জ্বর আর চিকুনগুনিয়ার জ্বরের মধ্যে কিছু লক্ষণগত পার্থক্য রয়েছে। এসব লক্ষণ দেখে সচেতন হয়ে চিকিৎসা নিলে ভ্রান্তির অবকাশ থাকে না। চিকুনগুনিয়ার কোনো অ্যান্টিবায়োটিক নেই, তার পরও অনেক সময় অন্য রোগের কারণে দিতে হতে পারে। পরিস্থিতি বুঝে সে সিদ্ধান্ত চিকিৎসকরাই নেন।
 
অধ্যাপক ডা. বি এম আবদুল্লাহ
ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)

জেনারেল স্বাস্থ্য
শিশু স্বাস্থ্য
For Ad
নারী স্বাস্থ্য
পুরুষ স্বাস্থ্য

যেভাবে ইবোলা ভাইরাস ছড়ায়
সাম্প্রতিক রোগ
বদভ্যাসে কিডনি বেহাল
শিশুর ওষুধ সেবনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
শিশু স্বাস্থ্য
শিশুর বমি
শিশুদের জন্মগত হৃদরোগ
পুরুষের যৌন প্রবৃত্তি বাড়ায় মসলাদার খাবার
জোড়ার আঠালো পদার্থ শুকিয়ে গেলে
ফুসফুস ক্যানসার চিকিৎসায় ‘মাইলফলক’
ত্বকে ক্রিম লাগাবেন যেভাবে
তিন লিটার পানি বয়স কমাল ১০ বছর
গর্ভবতী মা কখন ও কতবার যাবেন চিকিৎসকের কাছে?
খাদ্য ও পুষ্টি
গরমে লেবুর সরবত
রোজায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিছু টিপস
রক্তের চর্বি কমানোর জন্য খাদ্যের নিয়ম
কলেরা প্রতিরোধে কম দামি সফল টিকা
হঠাৎ বৃষ্টি ও গরমে ঠান্ডা-জ্বর হলে কি করবেন
কৃমিনাশক ওষুধ সেবনের উত্তম যে সময়
রোজাদার রোগীদের ওষুধপথ্য ও সতর্কতা অবলম্বন
অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধের ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
আদা
প্রশ্নোত্তর : রক্তচাপ
আপনার প্রশ্ন বিশেষজ্ঞের উত্তর
প্রশ্নোত্তর- বিষয়: কিডনি রোগ
হাততালিও হতে পারে প্রতিদিন সুস্থ থাকার হাতিয়ার
প্রতিনিয়ত দাঁতের ক্ষতি যেভাবে করি
গরমে স্বাস্থ্য- সচেতনতা
মস্তিষ্কে কি ঘটে, যখন নারী মাতৃত্ব লাভ করেন
একরাতেই ব্রণ দূর করার কৌশল
মরণব্যাধি ক্যান্সারের যে ১০ টি সতর্কীকরণ ল¶ণ অবহেলা করবেন না
দীর্ঘ ভ্রমণে স্বাস্থ্য সতর্কতা
ভ্রমণে স্বাস্থ্য সতর্কতা
টিনএজারদের ব্রণ সমস্যা ত্বকের সৌন্দর্যহানীর জন্য দায়ী
স্ক্যাবিস বা চুলকানি প্রতিরোধে করণীয়
ত্বকের যেসব রোগে চিকিৎসা একান্ত দরকার
হৃদরোগ প্রতিরোধে আপনি যা করবেন
হৃদরোগ প্রতিরোধে আপনি যা করবেন
প্রচন্ড গলাব্যথা ও টনসিলে ইনফেকশন
নাক-কান-গলার ক্যান্সার হতে সতর্ক ও সাবধান হওয়া
হঠাৎ কানের পর্দায় আঘাত পেলে
পেপটিক আলসারের আদ্যোপান্ত
অ্যালার্জি ও হাঁপানির থেকে পরিত্রাণ
কাশি যখন সমস্যা
দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের অন্যতম কারণ যখন রেটিনা
চোখের নিচের কালো দাগ কমানোর উপায় (১১ অক্টোবর বিশ্ব দৃষ্টি দিবস)
চোখ উঠলে যা করবেন
শীতকালে হাটুর ক্ষতি এড়াতে ১০টি বিষয় জেনে নিন
ঘাড়, মাথা ও বুক ব্যথার লক্ষণ ও চিকিৎসা
সকল প্রকার ব্যথায় কী বাত?
লিভার ডিজিজের অন্যতম ভয়াবহ কারণ এলকোহল
জানুন যকৃতের জন্য ভালো ও মন্দ খাবার কী
ভাইরাল হেপাটাইটিস একটি জটিল ও নিরাময়যোগ্য রোগ (২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস)
প্রশ্নোত্তরে মানসিক রোগ সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ জেনে নিই। (১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস)
হয়তো আপনার ঘরেই আছে সিজোফ্রেনিয়া রোগী
সিজোফ্রেনিয়া একটি অন্যতম মানসিক রোগ (১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস)
হাত-পায়ে জ্বালাপোড়া অনুভব করলে করণীয়
গেঁটে বাত হলে কী করবেন?
বার্ধক্যে যত ব্যথা-বেদনা
জেনে শুনে যেভাবে দাঁতের ক্ষতি করছেন