রক্ত লোনা জিনিস, আমরা জানি। তার মানে রক্তের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে লবণ। এই লবণ মানে মূলত সোডিয়াম। রক্তের ঘনত্ব আসলে নির্ভর করে রক্তের সোডিয়ামের পরিমাণের ওপর। তাই রক্তে কোনো কারণে সোডিয়ামের মাত্রা এদিক-সেদিক হলে রক্তের ঘনত্ব পাল্টে যায়। ফলে দেখা দেয় নানা সমস্যা।
রক্তে লবণের মাত্রা কমে গেলে বমি ভাব, নিস্তেজ ভাব, দুর্বলতা, অসংলগ্ন কথাবার্তা, চিন্তাভাবনা থেকে শুরু করে খিঁচুনি ও অজ্ঞান হয়ে পড়ার মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। লবণের ঘাটতি সামান্য হলে উপসর্গও হয় কম, বেশি হলে রোগী অচেতন হয়ে যেতে পারে। নানা কারণে আমাদের শরীরে লবণ কমে যেতে পারে। ডায়রিয়া, বমি, খুব বেশি ঘাম, পোড়া ত্বকের মাধ্যমে শরীর পানি হারানোর পাশাপাশি লবণও হারায়। ফলে রক্তে পানি ও লবণ দুটোরই ঘাটতি হয়। লবণ-পানির স্যালাইন খেয়ে বা শিরায় দিয়ে এই ঘাটতি পূরণ করতে হয়। আবার প্রস্রাবের সঙ্গে কোনো কারণে বেশি লবণ বেরিয়ে গেলেও লবণের ঘাটতি হতে পারে। কিডনির নানা সমস্যা ও কিছু ওষুধের (যেমন: ডাইইউরেটিক) কারণে প্রস্রাবের সঙ্গে লবণ বেরিয়ে যেতে পারে। কোনো কারণে শরীরে পানি বেশি জমে গেলে রক্তে লবণের ঘাটতি হয়েছে বলে মনে হয়। এ ক্ষেত্রে আসলে পানির তুলনায় লবণের পরিমাণ কম বলেই এমনটা ঘটে। কিডনি ও যকৃতের সমস্যা, হার্ট ফেইলিউর ইত্যাদি কারণে এভাবে অতিরিক্ত পানি জমে যেতে পারে। অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির সমস্যায়, থাইরয়েডের সমস্যায় লবণ কমে। মস্তিষ্কের কোনো সংক্রমণ, আঘাত, অস্ত্রোপচারের পর লবণ নিয়ন্ত্রক হরমোনের অসামঞ্জস্যের কারণে লবণ কমে যেতে পারে।
যে কারণেই কমুক, লবণের ঘাটতি কিন্তু একটি মারাত্মক সমস্যা। বয়স্ক ব্যক্তিরা বেশি এই ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। কমে যাওয়া লবণ আবার খুব দ্রুত বাড়ানোর কাজটাও সমস্যা। এতে মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। তাই লবণ পরীক্ষা করে (রক্তের ইলেকট্রোলাইট) ধীরে ধীরে সঠিক মাপের ও সঠিক ধরনের স্যালাইনের মাধ্যমে লবণের মাত্রা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হয়। হাসপাতালে ভর্তি রেখেই এটা করতে হবে। লবণ কমে যাওয়ার কারণ বের করে তার চিকিৎসাও দিতে হবে।
ডা. মৌসুমী মরিয়ম সুলতানা
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতাল, মিরপুর, ঢাকা