স্বাস্থ্য বার্তা

মাতৃমৃত্যু রোধে জন্ম নিয়ন্ত্রণের সঠিক (কনডমের) ব্যবহার বিশ্বকে শিখিয়েছে বাংলাদেশ! (৯ আগস্ট জাতীয় নারী দিবস)

“A condom to save a new mum’s life” শিরোনামে  বিবিসি একটি  সংবাদ প্রচার করে ১লা আগস্ট। এরপর ২রা আগস্ট প্রথম আলো “কনডম বাঁচাতে পারে লাখো মায়ের জীবন!” এই শিরোনামে আরেকটি সংবাদ প্রচার করে। ওই দুটি প্রতিবেদনে জানানো হয় কেনিয়ার ইউবিটি কিট নামের একটি উদ্ভাবনের কথা যাতে কনডম ব্যবহার করে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর একজন মায়ের বিপজ্জনক রক্তক্ষরণ কমানো যায় সহজেই।

কিন্তু এই উদ্ভাবনটি আসলে বাংলাদেশি ডাক্তারের ডাঃ সায়েবা আকতার-এর। ওই দুটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর সারা দেশে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এই ব্যাপারে ফেইসবুকে বিভিন্ন স্ট্যাটাস ও সংবাদ সম্মেলন করেন ডাঃ সায়েবা আকতার ও আরও কয়েকজন ডাক্তার। পরে ফেইসবুক লাইভেও এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ডাঃ সায়েবা আকতার।

সাধারণ কনডম দিয়ে প্রসবকালীন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণজনিত মৃত্যু থেকে বিশ্বের লাখো মায়ের জীবন বাঁচানোর পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের এই গাইনি রোগ বিশেষজ্ঞ। প্রচারবিমুখ এই চিকিৎসককে অনেকটা জোর করে তাঁর শিক্ষার্থীরা নিয়ে এসেছেন রাজধানীর মগবাজারের মামস ইনস্টিটিউট অব ফিস্টুলা অ্যান্ড উইমেন্স হেলথ সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে। নিজ মুখেই তিনি বললেন কীভাবে কনডমের মাধ্যমে তিনি সায়েবা মেথডের আবিষ্কার করলেন।
 
স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সায়েবা বলেন, ‘একটা কনডমকে একটা ক্যাথেটারের মাধ্যমে আমরা টাই করি। টাই করে ইউটেরাসের ভিতর কনডমটা ঢুকিয়ে দেই। ঢুকিয়ে দিয়ে স্যালাইন ঢুকিয়ে যখন কনডমটাকে ইনফ্লেট (ফোলানো) করা হয়, সেটা কী করে, ভেতর থেকে ইউটেরাসের সাইনাস যেগুলোকে বলা হয়, কিছু কিছু ব্লাড ভেসেল ওপেন হয়ে থাকে যেখান থেকে ব্লিডিং হয় ওগুলোর ওপর প্রেসার দেয়। প্রেসার দিয়ে ব্লিডিংটা বন্ধ করে দেয়।’
যে রোগীর কলের মতো রক্তপাত হয় সেটাও ১০ মিনিটের মধ্যে এই পদ্ধতি প্রয়োগে বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান এই চিকিৎসক। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চামড়ার কোথাও যদি কেটে যায় তবে তা চেপে ধরে থাকলে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে কনডম ফুলিয়ে জরায়ু মুখে প্রসবকালীন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের পথ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে সায়েবা মেথডের মাধ্যমে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নাল ও গবেষণায় ইতিমধ্যেই সায়েবা মেথড আলোচিত নাম। দেশের সায়েবা মেথডের পেটেন্ট বা স্বত্ত্বও রয়েছে। এখন প্রয়োজন আন্তর্জাতিকভাবে সায়েবা মেথডকে পেটেন্টের আওতায় আনা।

এই বিষয়ে এ ব্যাপারে মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ উপজিলা হেলথ কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ নাজিরুম মুবিনের ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, য‌ারা এখ‌নো অধ্যাপক সা‌য়েবা আখতার‌কে চেনেন না তা‌দের জন্য ব‌লি ৩০-৪০ বছর আগেও বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল অনেক বেশি। এর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল প্রসব পরবর্তী রক্তপাত।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় পোস্ট পারটাম হেমোরেজ বা পিপিএইচ। পিপিএইচের চিকিৎসা পদ্ধতি ছিল বেশ ব্যয়বহুল। বাংলাদেশসহ অন্যান্য অনুন্নত দেশের জনগণের জন্য যা বহন করা সম্ভব ছিল না। তাই অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যেত মায়েরা সন্তান জন্মদানের সময় মারা যেত। মৃত মায়ের সন্তানরাও বেশিদিন বাঁচত না। কখনো কখনো মাকে বাঁচাতে গিয়ে জরায়ু কেটে ফেলে দিতে হতো। সেক্ষেত্রে ওই মহিলা চিরদিনের জন্য মা হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতো।

এই চিত্রটি ২০০০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি অ্যান্ড অবস্টেট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক ডা. সায়েবা আকতার (Sayeba Akhter) ম্যাডামকে খুব ভাবিয়েছিল। ম্যাডাম পিপিএইচের জন্য স্বল্প খরচে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি খুঁজছিলেন। রক্তপাত বন্ধের প্রধান উপায় হলো প্রেশার বা চাপ দেয়া। কোন ভাবে জরায়ুর ভেতরে কোন কিছু দিয়ে চাপ দিলে হয়তোবা রক্তপাত বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু চাইলেই তো যেকোন বস্তু মানবদেহের ভেতরে প্রবেশ করানো যায় না। স্টেরিলিটির ব্যাপার আছে। মেডিকেল ইথিক্সের ব্যাপার আছে।
হঠাৎ ম্যাডামের মনে হলো বাচ্চারা তো ফ্যামিলি প্ল্যানিং এর ফ্রি কনডম দিয়ে বেলুন বানিয়ে খেলে। কনডম একটা এফডিএ অনুমোদিত মেডিকেল ডিভাইস। ম্যাডাম কনডমের ভিতরে পানি ঢুকিয়ে এর স্থিতিস্থাপকতা পরীক্ষা করলেন। এটা জরায়ুর ভেতরে প্রবেশ করিয়ে যদি পানি দেয়া যায় তাহলে একসময় সেটা জরায়ুর দেয়ালে চাপ দিবে ফলে রক্তপাত বন্ধ হবে। ম্যাডাম পরের দিন সকালে অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে দেখেন একজন মহিলাকে টোটাল হিস্টেরেকটমির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। অর্থাৎ তার জরায়ু কেটে ফেলে দেয়া হবে। কারণ তার প্রসব পরবর্তী রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। ম্যাডাম তখন প্রথমবারের মতো কনডম টেম্পোনেড ব্যবহার করলেন। আশ্চর্যজনকভাবে ১৫ মিনিটের মধ্যেই রক্তপাত বন্ধ হয়েছিল। রোগিটি তার জরায়ুসহ সুস্থভাবে বাড়ি ফিরেছিল।

২০০১-২০০২ সাল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অধ্যাপক ডা. সায়েবা আকতারের নেতৃত্বে ২৩ জন রোগিকে এই চিকিৎসা দেয়া হয় এবং তাদের প্রত্যেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেন।
২০০৩ সালে ম্যাডামের এই আবিষ্কার ও গবেষণা কর্মটি মেডস্কেপ মেডিকেল জার্নালে “Use of condom in the control of massive postpartum hemorrhage. Medscape General Medicine 2003; 5(3): 38. শিরোনামে প্রথম পাবলিশ হয়। পরবর্তীতে এটি অরিজিনাল রিসার্চ পেপার হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব গাইনি অ্যান্ড অবসেও পাবলিশ হয়। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে রিভিউ আর্টিকেল হিসেবে পাবলিশ হয়। বিশ্বজুডড় এটি সায়েবা’স মেথড হিসেবে পরিচিতি পায়। আন্তর্জাতিক জার্নালে পাবলিশ হওয়ার পর বিভিন্ন দেশে ম্যাডামকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় সায়েবা’স মেথড সম্পর্কে তাদের দেশের ডাক্তারদের প্রশিক্ষিত করার জন্য। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ম্যাডামের এই মেথড নিয়ে এফসিপিএস ডিজার্টেশন, এমএস থিসিস, পিএইচডি থিসিস হয়েছে। ম্যাডামকে রয়্যাল কলেজ অব অবস অ্যান্ড গাইনোকলজিস্ট থেকে অনারারি ফেলোশিপও দেয়া হয়েছে।
 
তিনি তার ক্লিনিকে এই পদ্ধতিতে ৬ জন মায়ের জীবন বাঁচিয়েছেন। এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে অনুন্নত দেশগুলোর আরো অনেক মায়ের জীবন বাঁচবে বলে আশা করা হয়। দৈনিক প্রথম আলো ও দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন বিবিসির ডকুমেন্টারিটা শুধু বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশ করে। কেনিয়ার একজন মিডওয়াইফের নতুন আবিষ্কৃত চিকিৎসা পদ্ধতির খবর দেশবাসীকে জানায়। ৬ জন মায়ের জীবন বাঁচানোকে বাহাবা দেয়। অথচ এটা যে একজন বাংলাদেশি ডাক্তারেরই আবিষ্কার। শুধু ৬ জন না গত ১৭ বছরে সারাবিশ্বজুড়ে লক্ষাধিক মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে এই পদ্ধতি সেটা দেশের মানুষের অজানাই রয়ে গেলো।

সূত্র: ২৪বিডিহেলথ.কম
এবং অনলাইন পত্রিকা অবলম্বনে

জেনারেল স্বাস্থ্য
শিশু স্বাস্থ্য
For Ad
নারী স্বাস্থ্য
পুরুষ স্বাস্থ্য

যেভাবে ইবোলা ভাইরাস ছড়ায়
সাম্প্রতিক রোগ
বদভ্যাসে কিডনি বেহাল
শিশুর ওষুধ সেবনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
শিশু স্বাস্থ্য
শিশুর বমি
শিশুদের জন্মগত হৃদরোগ
পুরুষের যৌন প্রবৃত্তি বাড়ায় মসলাদার খাবার
জোড়ার আঠালো পদার্থ শুকিয়ে গেলে
ফুসফুস ক্যানসার চিকিৎসায় ‘মাইলফলক’
ত্বকে ক্রিম লাগাবেন যেভাবে
তিন লিটার পানি বয়স কমাল ১০ বছর
গর্ভবতী মা কখন ও কতবার যাবেন চিকিৎসকের কাছে?
খাদ্য ও পুষ্টি
গরমে লেবুর সরবত
রোজায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিছু টিপস
রক্তের চর্বি কমানোর জন্য খাদ্যের নিয়ম
কলেরা প্রতিরোধে কম দামি সফল টিকা
হঠাৎ বৃষ্টি ও গরমে ঠান্ডা-জ্বর হলে কি করবেন
কৃমিনাশক ওষুধ সেবনের উত্তম যে সময়
রোজাদার রোগীদের ওষুধপথ্য ও সতর্কতা অবলম্বন
অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধের ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
আদা
প্রশ্নোত্তর : রক্তচাপ
আপনার প্রশ্ন বিশেষজ্ঞের উত্তর
প্রশ্নোত্তর- বিষয়: কিডনি রোগ
হাততালিও হতে পারে প্রতিদিন সুস্থ থাকার হাতিয়ার
প্রতিনিয়ত দাঁতের ক্ষতি যেভাবে করি
গরমে স্বাস্থ্য- সচেতনতা
মস্তিষ্কে কি ঘটে, যখন নারী মাতৃত্ব লাভ করেন
একরাতেই ব্রণ দূর করার কৌশল
মরণব্যাধি ক্যান্সারের যে ১০ টি সতর্কীকরণ ল¶ণ অবহেলা করবেন না
দীর্ঘ ভ্রমণে স্বাস্থ্য সতর্কতা
ভ্রমণে স্বাস্থ্য সতর্কতা
টিনএজারদের ব্রণ সমস্যা ত্বকের সৌন্দর্যহানীর জন্য দায়ী
স্ক্যাবিস বা চুলকানি প্রতিরোধে করণীয়
ত্বকের যেসব রোগে চিকিৎসা একান্ত দরকার
হৃদরোগ প্রতিরোধে আপনি যা করবেন
হৃদরোগ প্রতিরোধে আপনি যা করবেন
প্রচন্ড গলাব্যথা ও টনসিলে ইনফেকশন
নাক-কান-গলার ক্যান্সার হতে সতর্ক ও সাবধান হওয়া
হঠাৎ কানের পর্দায় আঘাত পেলে
পেপটিক আলসারের আদ্যোপান্ত
অ্যালার্জি ও হাঁপানির থেকে পরিত্রাণ
কাশি যখন সমস্যা
দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের অন্যতম কারণ যখন রেটিনা
চোখের নিচের কালো দাগ কমানোর উপায় (১১ অক্টোবর বিশ্ব দৃষ্টি দিবস)
চোখ উঠলে যা করবেন
শীতকালে হাটুর ক্ষতি এড়াতে ১০টি বিষয় জেনে নিন
ঘাড়, মাথা ও বুক ব্যথার লক্ষণ ও চিকিৎসা
সকল প্রকার ব্যথায় কী বাত?
লিভার ডিজিজের অন্যতম ভয়াবহ কারণ এলকোহল
জানুন যকৃতের জন্য ভালো ও মন্দ খাবার কী
ভাইরাল হেপাটাইটিস একটি জটিল ও নিরাময়যোগ্য রোগ (২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস)
প্রশ্নোত্তরে মানসিক রোগ সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ জেনে নিই। (১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস)
হয়তো আপনার ঘরেই আছে সিজোফ্রেনিয়া রোগী
সিজোফ্রেনিয়া একটি অন্যতম মানসিক রোগ (১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস)
হাত-পায়ে জ্বালাপোড়া অনুভব করলে করণীয়
গেঁটে বাত হলে কী করবেন?
বার্ধক্যে যত ব্যথা-বেদনা
জেনে শুনে যেভাবে দাঁতের ক্ষতি করছেন