স্বাস্থ্য বার্তা

ওষুধ ও পথ্যের সাহায্যে পাইলস রোগ যেভাবে ভালো হয়

আমাদের রোগ ব্যাধির মধ্যে মলদ্বারের রোগেই সবচেয়ে বেশি স্ব-চিকিৎসা এবং হাতুড়ে চিকিৎসা হয়। কিছুটা ভয় এবং বিব্রতকর অনুভূতির জন্য এ জাতীয় রোগ হলে রোগীরা ডাক্তার দেখাতে চান না। রোগীরা নিজে নিজে অথবা সস্তায় পাওয়া হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে বেশি যান। বিভিন্ন কুসংস্কার এবং মলদ্বারের সব রোগই পাইলস এই ভ্রান্ত ধারণার কারণে চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরি করেন যা কখনও কখনও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে। হয় রোগটি শুরু থেকেই ক্যান্সার অথবা অবহেলার কারণে ইতিমধ্যে সেখানে ক্যান্সার হয়ে গেছে।

পাইলসের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে টয়লেটে রক্ত যাওয়া, মাংসপিণ্ড ঝুলে পড়া ও ব্যথা হওয়া। পাইলস যখন বাইরে ঝুলে পড়ে তখন শুধু ওষুদের মাধ্যমে এর চিকিৎসা সম্ভব নয়। যদি মাংসপিণ্ডটি ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া যায় তাহলে বিনা অপারেশনে রিং লাইগেশন পদ্ধতিতে এর চিকিৎসা সম্ভব। আর যদি মাংসপিণ্ডটি ভেতরে ঢুকান না যায় তাহলে অপারেশন করতে হবে। আবার পাইলসে ব্যথা হলে তার কারণ হচ্ছে থ্রম্বসিস, পচনধরা (গ্যাংথ্রিন) বা ঘা হয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে অপারেশনই যথাযথ চিকিৎসা।

যখন টয়লেটে টাটকা লাল রক্ত যায় এবং বাইরে কোনো বড় ধরনের মাংসপিণ্ড ঝুলে না থাকে সেক্ষেত্রে ওষুধ ও পথ্যের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যেতে পারে। তবে চিকিৎসককে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে, কী কারণে রক্ত যাচ্ছে। বিশেষ করে পায়ুপথের ভেতর কোনোরূপ ক্যান্সার আছে কি না।

যে রোগীরা পাইলসে ভোগেন তাদের সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া জাতীয় সমস্যা থাকে। অনেক রোগী আছেন যাদের পেটে গ্যাস হয়। পায়খানার সঙ্গে মিউকাস বা আম যায়। পায়খানা করার পর মনে হয় ক্লিয়ার হয়নি। দুধ, পোলাউ, ঝাল, গরুর মাংস ইত্যাদি খেলে হজমে গোলমাল হয়। টয়লেটে অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। অনেকে মলদ্বারের ভেতর আঙ্গুল দিয়ে মলত্যাগ করেন। রোগীরা এ সমস্যাগুলোকে গ্যাস্ট্রিক বা ক্রনিক আমাশয় হিসেবে মনে করেন। চিকিৎসা পরিভাষায় একে আমরা বলি ‘ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রাম’ বা ‘আইবিএস’। এ জাতীয় রোগীদের দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, পোলাউ, ঝাল, বিরিয়ানি খাওয়া নিষেধ।

উপদেশ: পাইলসে যে দুটি রোগ সবচেয়ে বেশি সমস্যা করে তা হল কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া। বেশিরভাগ রোগীর খাদ্যাভ্যাসে ত্রুটি থাকে এবং মলদ্বার ভালোভাবে পরিষ্কার রাখেন না। যদি রোগীর নরম পায়খানা, চুলকানি ও সামান্য রক্ত যায় তাহলে তাকে আঁশজাতীয় খাবার দেয়া যেতে পারে। ডায়রিয়া হয় এমন খাবার পরিহার করতে হবে। মলত্যাগের পর মলদ্বার ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

মলত্যাগের কু-অভ্যাস ত্যাগ: পাইলস রোগীদের তিনটি কু-অভ্যাস দেখা যায়। ১. যেভাবেই হোক প্রতিদিন অন্তত একবার পায়খানা করতে হবেই। এটি না হলে তারা সারাদিন শারীরিক ও মানসিক টেনশনে ভোগেন। ২. সকাল বেলা প্রথমবার যখন মলত্যাগের বেগ হয় তখন তাতে সাড়া দেন না। ৩. পায়খানা ক্লিয়ার হয়নি ভেবে টয়লেটে অনেকক্ষণ বসে থাকেন এবং কোথ দেন যেন রেকটাম থেকে পায়খানা সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে যায়। তাদের বিশ্বাস, যদি সামান্য মল ভেতরে থেকে যায় তাহলে সারাদিন অস্বস্তিতে কাটাতে হবে।

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন: আমরা প্রচুর রোগী পাই বিশেষ করে শিশুদের সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাবে পায়ুপথের বিভিন্ন রোগ হয়। পায়খানার পরিমাণ বাড়ে এমন খাবার খাওয়া উচিত। যেমন শাক, সবজি, সালাদ, ফল, ইসুপগুলের ভুসি, গমের ভুসি ইত্যাদি। দৈনিক পরিমিত পানীয় খেতে হবে। একজন পূর্ণবয়স্ক লোকের জন্য ৬-৮ গ্লাস পানি প্রতিদিন পান করতে হবে। অনেক রোগীকে এসব উপদেশ দিলে তারা ক’দিন পরে ভুলে যান অথবা আবার ওই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার ক’দিন আগে আবার খান যাতে তাকে বলতে পারেন যে হ্যাঁ, আমি ভুসি বা সালাদ খেয়েছি। 

ইসুপগুলের ভুসি দোকানে পাওয়া যায় আবার ওষুধ কোম্পানিও বানায়। এছাড়া আঁশ হিসেবে মিথাইল সেলুলেজ ট্যাবলেটও পাওয়া যায়। বিভিন্ন বিজ্ঞানী আঁশ জাতীয় খাবারের কার্যকারিতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন ডা. ওয়েবস্টার (ইংল্যান্ড) ও ডা. মোয়েসগার্ড (ডেনমার্ক)।

পাইলসের ওষুধ: পাইলসের রক্ত বন্ধের জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যবহার হয়ে আসছে যেমন ট্রানেক্স ক্যাপসুল ১টি করে ২ বার ৫ দিন অথবা এনারক্সিল ১টি করে তিনবার ৫ দিন। সর্বশেষ যে ওষুধটি বাজারে এসেছে তার নাম ফ্লাভোনয়িক এসিড। এটির কার্যকারিতা নিয়ে এখনও বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চলছে। প্রাথমিক পাইলসে এটি ভালো কাজ দেবে বলে আশা করা যায়। এটির রোগীদের প্রতি অনুরোধ দয়া করে কোনো চিকিৎসাই নিজে নিজে করবেন না।

মলদ্বারে ব্যবহৃত ওষুধ: পাইলসের সমস্যা এত বেশি যে বেশিরভাগ রোগীই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ বা মলম লাগিয়ে থাকেন। এমনকি বাসার জন্য কারো কোনো কারণে একটি অয়েন্টমেন্ট দেয়া হয়েছিল সেটিই নিজে নিজে লাগাতে থাকেন। বিভিন্ন ধরনের অয়েন্টমেন্ট ক্রিম, সাপোজিটরি, জেল বাজারে পাওয়া যায়।

এসব ওষুধের ভেতর বিভিন্ন ধরনের ওষুধের সংমিশ্রণ থাকে যেমন অবশকারী ওষুধ, স্টেরয়েড ও এন্টিসেপ্টিক। এসব ওষুধের ভেতর অবশকারী ওষুধটি ব্যথা ও চুলকানি কমাতে পারে কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চামড়ায় এলার্জি হতে পারে। লোকাল এনেন্থেটিক ও স্টেরয়েড ওষুধের সংমিশ্রণ মলদ্বারের কষ্ট কমাতে কোনো বাড়তি ভূমিকা রাখে না। আমাদের দেশে যে সব অয়েন্টমেন্ট পাওয়া যায় যেমন ইরিয়ান, এনুস্ট্যাট, নুপারকেইনাল ও হেডেনসা এবং রিলিচ রেকটাল অয়েন্টমেন্ট। এগুলো মলদ্বারের সামান্য ভেতরে দিনে ২-৩ বার লাগাতে হয় ৭-১৪ দিন।

অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক   
লেখক : বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ
 

জেনারেল স্বাস্থ্য
শিশু স্বাস্থ্য
For Ad
নারী স্বাস্থ্য
পুরুষ স্বাস্থ্য

যেভাবে ইবোলা ভাইরাস ছড়ায়
সাম্প্রতিক রোগ
বদভ্যাসে কিডনি বেহাল
শিশুর ওষুধ সেবনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
শিশু স্বাস্থ্য
শিশুর বমি
শিশুদের জন্মগত হৃদরোগ
পুরুষের যৌন প্রবৃত্তি বাড়ায় মসলাদার খাবার
জোড়ার আঠালো পদার্থ শুকিয়ে গেলে
ফুসফুস ক্যানসার চিকিৎসায় ‘মাইলফলক’
ত্বকে ক্রিম লাগাবেন যেভাবে
তিন লিটার পানি বয়স কমাল ১০ বছর
গর্ভবতী মা কখন ও কতবার যাবেন চিকিৎসকের কাছে?
খাদ্য ও পুষ্টি
গরমে লেবুর সরবত
রোজায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিছু টিপস
রক্তের চর্বি কমানোর জন্য খাদ্যের নিয়ম
কলেরা প্রতিরোধে কম দামি সফল টিকা
হঠাৎ বৃষ্টি ও গরমে ঠান্ডা-জ্বর হলে কি করবেন
কৃমিনাশক ওষুধ সেবনের উত্তম যে সময়
রোজাদার রোগীদের ওষুধপথ্য ও সতর্কতা অবলম্বন
অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধের ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
আদা
প্রশ্নোত্তর : রক্তচাপ
আপনার প্রশ্ন বিশেষজ্ঞের উত্তর
প্রশ্নোত্তর- বিষয়: কিডনি রোগ
হাততালিও হতে পারে প্রতিদিন সুস্থ থাকার হাতিয়ার
প্রতিনিয়ত দাঁতের ক্ষতি যেভাবে করি
গরমে স্বাস্থ্য- সচেতনতা
মস্তিষ্কে কি ঘটে, যখন নারী মাতৃত্ব লাভ করেন
একরাতেই ব্রণ দূর করার কৌশল
মরণব্যাধি ক্যান্সারের যে ১০ টি সতর্কীকরণ ল¶ণ অবহেলা করবেন না
দীর্ঘ ভ্রমণে স্বাস্থ্য সতর্কতা
ভ্রমণে স্বাস্থ্য সতর্কতা
টিনএজারদের ব্রণ সমস্যা ত্বকের সৌন্দর্যহানীর জন্য দায়ী
স্ক্যাবিস বা চুলকানি প্রতিরোধে করণীয়
ত্বকের যেসব রোগে চিকিৎসা একান্ত দরকার
হৃদরোগ প্রতিরোধে আপনি যা করবেন
হৃদরোগ প্রতিরোধে আপনি যা করবেন
প্রচন্ড গলাব্যথা ও টনসিলে ইনফেকশন
নাক-কান-গলার ক্যান্সার হতে সতর্ক ও সাবধান হওয়া
হঠাৎ কানের পর্দায় আঘাত পেলে
পেপটিক আলসারের আদ্যোপান্ত
অ্যালার্জি ও হাঁপানির থেকে পরিত্রাণ
কাশি যখন সমস্যা
দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের অন্যতম কারণ যখন রেটিনা
চোখের নিচের কালো দাগ কমানোর উপায় (১১ অক্টোবর বিশ্ব দৃষ্টি দিবস)
চোখ উঠলে যা করবেন
শীতকালে হাটুর ক্ষতি এড়াতে ১০টি বিষয় জেনে নিন
ঘাড়, মাথা ও বুক ব্যথার লক্ষণ ও চিকিৎসা
সকল প্রকার ব্যথায় কী বাত?
লিভার ডিজিজের অন্যতম ভয়াবহ কারণ এলকোহল
জানুন যকৃতের জন্য ভালো ও মন্দ খাবার কী
ভাইরাল হেপাটাইটিস একটি জটিল ও নিরাময়যোগ্য রোগ (২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস)
প্রশ্নোত্তরে মানসিক রোগ সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ জেনে নিই। (১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস)
হয়তো আপনার ঘরেই আছে সিজোফ্রেনিয়া রোগী
সিজোফ্রেনিয়া একটি অন্যতম মানসিক রোগ (১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস)
হাত-পায়ে জ্বালাপোড়া অনুভব করলে করণীয়
গেঁটে বাত হলে কী করবেন?
বার্ধক্যে যত ব্যথা-বেদনা
জেনে শুনে যেভাবে দাঁতের ক্ষতি করছেন