আর্থ্রোস্কপিক সার্জারি হলো আর্থ্রোস্কপের সাহায্যে অস্থিসন্ধিতে সার্জারি বা অপারেশন করা। আর্থ্রোস্কপ দেখতে পেনসিলের প্রস্থের মতো প্রস্থের একটি নমনীয় টিউব। এই টিউবের মধ্যে থাকে অপটিক ফাইবার, একটি ছোট লেন্স এবং একটি লাইট স্কোপ। জয়েন্ট ক্যাপসুলে একটি ছোট ইনসিশন দিয়ে আর্থ্রোস্কপ প্রবেশ করানো হয়। লিখেছেন ডা: মিজানুররহমানকল্লোল
আর্থ্রোস্কপের সাহায্যে সার্জন অস্থিসন্ধির ভেতরটা ভালো করে দেখতে পারেন। ভেতরের দৃশ্যগুলো ভিডিও স্ক্রিনে বড় করে দেখা যায়। আর্থ্রোস্কপের চ্যানেল দিয়ে যাওয়া যন্ত্রপাতির দ্বারা সার্জন অস্থিসন্ধির মধ্যে কিছু পদ্ধতি সম্পন্ন করে থাকেন। এ পদ্ধতিটি রোগীকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে সম্পন্ন করা হয়, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্পাইনাল অ্যানেসথেশিয়া দেয়া হয়। আর্থ্রোস্কপিক সার্জারিতে রোগীকে কম সময় হাসপাতালে থাকতে হয়।
প্রশ্ন : আর্থ্রোস্কপির মাধ্যমে কীভাবে সাইনোভিয়াম কেটে ফেলা হয়?
উত্তর : সাইনোভিয়াম কেটে ফেলে দেয়াকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলে সাইনোভেকটমি। প্রথমে বাতাস বা ফ্লুইড ঢুকিয়ে জয়েন্ট ক্যাপসুলকে প্রসারিত করা হয়, এরপর হাঁটুর একদিকে একটি ছোট ইনসিশন দিয়ে আর্থ্রোস্কপ ঢুকানো হয়। সাকশন টিউবের সাথে সংযুক্ত ঘূর্ণায়মান ব্লেড বা কাটিং সুয়েপার হাঁটুতে ঢুকানো হয় অন্য দু’টি বা তিনটি ছোট ইনসিশন দিয়ে।
ভিউইং স্কোপকে গাইন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসক কাটিং সুয়েপার দিয়ে বর্ধিষ্ণু সাইনোভিয়াল টিস্যু কাটেন ও সাক করে বের করে আনেন।
প্রশ্ন : অন্যান্য অস্থি সন্ধিতে কীভাবে সাইনোভেকটমি করা হয়?
উত্তর : যখন এটি ছোট ছোট অস্থিসন্ধিতে করা হয়, যেমন কব্জি বা আঙুলে, একটি ইনসিশন দিয়ে সাইনোভিয়াম উন্মুক্ত করা হয়।
প্রশ্ন : কোন লোককে সবচেয়ে বেশি সাইনোভেকটমি করা হয়?
উত্তর : সাইনোভেকটমি সাধারণভাবে কেবল মাত্র ব্যাপক প্রদাহজনিত টিস্যু রয়েছে কিন্তু অস্থিসন্ধি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে করা হয়।
সাধারণত সাইনোভেকটমি করা হয় যেসব রোগী যাদের প্রদাহজনিত অস্থিসন্ধি রয়েছে, যা বিভিন্ন ওষুধ এমনকি স্টেরয়েড ইনজেকশনেও ভালো হয়নি, যদিও এক্সরেতে কার্টিলেজ সুস্থ দেখায়।
সাইনোভিয়াম কেটে ফেললে যেসব রোগের কারণে এটা হয়েছিল সেসব রোগ হয়তো সারে না কিন্তু এতে অস্থিসন্ধিতে আবার প্রদাহ হওয়া রোধ হতে পারে- কখনো কখনো কয়েক বছর এবং কখনো কখনো স্থায়ীভাবে।
প্রশ্ন : আর্থ্রাইটিসের শল্যচিকিৎসায় কী করা হয়?
উত্তর : কেবল মাত্র হাঁটুর ক্ষেত্রে আর্থ্রোস্কপিক ডিব্রাইডমেন্ট হলো তুলনামূলক সাধারণ পদ্ধতি। এ ক্ষেত্রে জয়েন্ট ক্যাপসুলের সাথে থাকা কার্র্টিলেজ ও হাঁড়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ পরিষ্কার করে ফেলা হয়। একই সময়ে কার্টিলেজের এবড়ো-থেবড়ো কিনারাগুলো ফেলে দেয়া হয়।
যদি অস্টিওআর্থ্রোইটিসের যেসব রোগীর এক্স-রে তে তেমন অস্থিসন্ধির ক্ষতি দেখা না যায় কিন্তু ব্যথানাশক ওষুধ ও স্টেরয়েড ইনজেকশনে ব্যথা না কমে তাহলে সে সব রোগীর সচরাচর আর্থ্রোস্কপিক ডিব্রাইডমেন্ট করা হয়। যেসব রোগীর হাঁটুতে কার্টিলেজ ছিঁড়ে এসে অবস্থান করে হাঁটুর স্বাভাবিক নড়াচড়ায় ব্যাঘাত ঘটায় তাদের ক্ষেত্রে এ অপারেশনে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। যাদের অস্থিসন্ধি খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের ক্ষেত্রে এ অপারেশন যথার্থ নয়, সে ক্ষেত্রে জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি করা যেতে পারে।
প্রশ্ন : এই পদ্ধতিতে কেমন কাজ হয়?
উত্তর : হাঁটুর আর্থ্রোস্কপিক ডিব্রাইডমেন্ট করালে শতকরা ৬০-৮০ ভাগ রোগীর ব্যথা কমে যায়।
প্রশ্ন : অন্য কোনো চিকিৎসায় কি আর্থ্রোস্কপিক সার্জার করা হয়?
উত্তর : হ্যাঁ, অস্থিসন্ধির ক্ষতিগ্রস্ত কার্টিলেজ ও লিগামেন্ট পুনর্গঠনের জন্য অস্থিসন্ধিতে ভাঙা হাড় পিন দিয়ে জোড়া লাগানোর জন্য এবং স্ক্যার টিস্যু অপসারণের জন্য আর্থ্রোস্কপিক সার্জারি করা হয়।
প্রশ্ন : আর্থ্রোস্কপিক সার্জারি কি ঝুঁকিপূর্ণ?
উত্তর : জরিপে দেখা গেছে, আর্থ্রোস্কপিক সার্জারির সার্বিক জটিলতার হার এক শতাংশের প্রায় অর্ধেক। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ইনফেকশন, স্নায়ু বা রক্তনালির ক্ষতি এবং রক্ত জমাট হওয়া। যেকোনো শল্য চিকিৎসায় আপনি এমন ডাক্তার খুঁজবেন যিনি নিয়মিত এ ধরনের সার্জারি করেন।
ডা: মিজানুররহমানকল্লোল
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইমার্জেন্সি বিভাগ এবং
সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিভাগ,
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।