স্বাস্থ্য বার্তা

লাইপোসাকশনের মাধ্যমে বাড়তি মেদ কমাতে প্লাস্টিক সার্জারি

দু'যুগ আগেও ধারণা ছিল সুস্থ সুন্দর দেহ মানেই মোটা থলথলে নাদুস নুদুস দেহ। কিন্তু এখন কেউ আর সেটা মনে করে না। সুস্থ সুন্দর দেহ মানে এখন মেদহীন সস্নিম শরীর। তাই সচেতন মানুষ শরীর থেকে বাড়তি মেদ কমানোর জন্য কতভাবেই না চেষ্টা করছে! সকাল বিকাল তারা মাইলের পর মাইল জগিং করছে, ব্যয়বহুল এক্সারসাইজ সেন্টাওে ভিড় করছে। মেদ কমানোর আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন তাদের টানছে। কেউ কেউ ডায়েটিং করেছেন দিনের পর দিন। না খেয়ে শরীর শুকানোর কঠিন সাধনায় রত তারা। এ রকম পদ্ধতি অবলম্বন করায় তারা সাময়িক ফলও হয়তো পান। শরীর থেকে মেদ ঝরে যায়, ওজন কমে যায়। নিজেকে হালকা মনে হয়। কিন্তু জগিং থেকে বিরত থাকলে, এক্সারসাইজ নিয়মিত না করলে কিংবা আবার অস্বাভাবিক মাত্রায় খাবার গ্রহণ করলে দেখা যায় পূর্বের সেই থল থলে দেহ আবার ফিরে আসে স্বরূপে। দেখা যায়, এক্সারসাইজ ডায়েটিং ওজনবিরোধী বটিকা সেবনে ওজন কমানোর পর অনেকের দেহের কিছু কিছু স্থানে মেদ এমনভাবে বাসা বেঁধে আছে, সে মেদ সে জায়গা থেকে কিছুতেই তাড়ানো যাচ্ছে না। শরীর সস্নিম হওয়া সত্ত্বেও দেহের এ স্থান বিশেষের অতিরিক্ত মেদের কারণে দেহের আকার-আকৃতি হয়ে গেছে অসুন্দর, অস্বাভাবিক। অনেক সময় বিদঘুটে, বিরক্তিকর। সজীবের বয়স ২৯। একটি বিদেশি ব্যাংকের আকর্ষণীয় বেতনের এক্সিকিউটিভ। সে দেখতে ভালো, স্বাস্থ্য চমৎকার। কিন্তু সে ইন করে শার্ট পরতে পারে না। সে শার্ট পরে প্যান্টের ওপর দিয়ে অথচ দু'বছর আগেও সে শার্ট ইন করে আর সবার মতোই ফিট হয়ে অফিসে যেত। দু'বছর আগে তার বন্ধু মজনু যে মন্তব্য করেছিল, কী গর্ভধারণ করেছিস নাকি! অন্য বন্ধু এ কথা শুনে হেসে উঠেছিল। সে নিজেও খুব লজ্জা পেয়েছিল, কিন্তু সে ভেবে পাচ্ছিল না কী করবে! ব্যায়াম-ডায়েটিং করেও তার পেটের এ মেদের স্তুপ দূর করতে পারছিল না। অতিরিক্ত মেদের জন্য তার তলপেট এতটাই বেঢপ আকৃতির ছিল যে এমন সরঘন মন্তব্যের জন্য তার বন্ধুকে খুব একটা দোষ দেয়া যায় না। কিন্তু সজীবের পেটের এ মেদ সরিয়ে তার পেটের আকার-আকৃতি ঠিক করার কি কোনো উপায় নেই? নাকি সে সারা জীবনই ঢিলা জামা দিয়ে তার স্ফীত উদর ঢেকে চলাফেরা করবে!

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সুযোগ গ্রহণ করে সজীব খুব সহজেই তার এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে। 'লাইপোসাকশন' পদ্ধতিতে তার পেটের এ অতিরিক্ত মেদ অপসারণ করে পেটের সুন্দর স্বাভাবিক রূপ ফিরিয়ে আনা যায় অনায়াসে।

লাইপোসাকশন কি : শরীরের অতিরিক্ত মেদ সার্জিকাল উপায়ে অপসারণের সর্বাধুনিক পদ্ধতি এটা। অভিজ্ঞ সার্জন ধাতব নল চামড়ার নিচে প্রবেশ করিয়ে দেহের নির্দিষ্ট স্থানের মেদ স্তরকে ভেঙে ফেলেন এবং সাকশন যন্ত্রের সাহায্যে সেই মেদ বের করে আনেন। সত্তর দশকের শেষদিকে সর্বপ্রথম ফ্রান্সে এ পদ্ধতিতে দেহ থেকে মেদ অপসারণ শুরু এবং রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৮১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেনসহ সারা বিশ্বের প্লাস্টিক সার্জনরা লাইপোসাকশন পদ্ধতির ব্যাপক প্রয়োগ শুরু করেন। ইদানীং উন্নত বিশ্বে লাইপোসাকশন হচ্ছে প্লাস্টিক সার্জারির সর্বাধিক প্রচলিত পদ্ধতি। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই দুই লাখের বেশি রোগী প্রতি বছর লাইপোসাকশন করাচ্ছেন।

শরীরে কোন স্থানে লাইপোসাকশন করা যায় : দেহের আকার-আকৃতিকে সুন্দর সুদর্শন করে তোলাই লাইপোসাকশনের উদ্দেশ্য। পেট, নিতম্ব, উরুতে মেদ জমে দেহ অসুন্দর হয়ে যায়। এ ছাড়াও মুখ, ঘাড়, বাহু, কোমর, হাত-পা, গলাসহ যে কোনো জায়গা থেকে মেদ সরিয়ে দেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায়। পুরুষদের বাড়তি স্তনের কারণে অনেকে বাসার ভেতরেও জামা পরে থাকতে বাধ্য হয়। এরা গেঞ্জি পরেও মানুষের সামনে আসতে লজ্জা পায়। লাইপোসাকশনের মাধ্যমে এ বাড়তি স্তনকে স্বাভাবিক আকৃতিতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। অপারেশনের তুলনায় লাইপোসাকশন পদ্ধতি অতি সহজ ও জটিলতামুক্ত। তাই এ ধরনের সমস্যার জন্য এখন আর ওপেন অপারেশন প্রয়োজন হয় না।

কে লাইপোসাকশনের উপযুক্ত রোগী : সাধারণভাবে মোটামুটি ওজনের এবং স্বাভাবিক ত্বকের গুণাগুণ সম্পন্ন যে কেউ এ পদ্ধতিতে তার দেহের মেদ অপসারণ করে দেহের আকার-আকৃতি স্বাভাবিক করতে পারেন। স্বাভাবিক ত্বকের বৈশিষ্ট্য হলো মেদ অপসারণের পরে নিজস্ব স্থিতিস্থাপকতার গুণে তা আবার টান টান হয়ে যায়। তাই লাইপোসাকশনের পর চামড়া ঝুলে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তাই স্বাভাবিক ত্বকের যে কোনো বয়সের যে কোনো ব্যক্তি লাইপোসাকশন করাতে পারেন।

অপসারিত মেদ কি আবার জমা হবে : না, এ সম্ভাবনা একেবারেই নেই। জন্মগ্রহণের সময় যে পরিমাণ মেদ কোষ নিয়ে মানুষ পৃথিবীতে আসে, তার সংখ্যা নির্দিষ্ট। তাই কোনো স্থান থেকে একবার লাইপোসাকশন করে মেদ সরালে সেখানে পুনরায় মেদ কোষ বাড়তে পারে না। তবে অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়ার ফলে শরীরের অন্যান্য অংশে চর্বি জমতে পারে। কিন্তু যেখানে লাইপোসাকশন করা হয় সেখানে মেদ আর কোনোদিনই জমা হতে পাওে না। তাই অপসারিত মেদ বিদায় নেয় চিরদিনের জন্য।
ঝুলে পড়া বিশাল বপুদের খবর : শুধু লাইপোসাকশন করে এ বিরাট ভুঁড়িওয়ালাদের ঝুলে পড়া পেট টান টান সমতল করা সম্ভব নয়। তাদের জন্য উপযোগী 'এবডোমিনোপ্লাস্টি' অপারেশন। এ অপারেশনে পেটের ঝুলে পড়া চামড়া আর পেটের মেদ অপসারণ করে পেটের মাংস প্লাইকেশনের মাধ্যমে টান টান করে দেয়া হয়। ফলে তারা ফিরে পায় মর্সৃণ সমতল ভুঁড়িবিহীন পেট।

লাইপোসাকশনের বিশেষ উপকারিতা : যদিও লাইপোসাকশনের মূল উদ্দেশ্য দেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, কিন্তু পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে এ অপারেশনের ফলে রক্তে উপকারী চর্বি কণা ঐউখ-এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে আসে। একই সঙ্গে হ্রাস পায় 'হার্ট অ্যাটাক' 'মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশনসহ' স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা। ডায়াবেটিক রোগীদের এ অপারেশনের পর অনেক সময় কম পরিমাণ ইনসুলিন নিতে দেখা গেছে।

চিকিৎসক হিসেবে অভিজ্ঞতা : যুক্তরাজ্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেরার পর ৭২, সাত মসজিদ রোড, ধানম-ি অবস্থিত কসমেটিকস সার্জারি সেন্টারে লাইপোসাকশন ও অন্যান্য কসমেটিক সার্জারি নিয়মিত শুরু হয়েছে। গত কয়েক বছরে ব্যক্তিগতভাবে শত শত উৎসাহী রোগীর লাইপোসাকশন করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাদের প্রায় ৮০ ভাগ মহিলারোগী। মহিলা রোগী দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে লাইপোসাকশনের মাধ্যমে মেদ কমিয়ে সুন্দরীদের দলে নাম লিখিয়েছেন। পুরুষ রোগীদের পেটের মেদ অপসারণ করে ভুঁড়ি কমিয়েছেন। পেট মসৃণ সমতল করেছেন। বেশ কিছু সংখ্যক পুরুষ তাদের বাড়তি স্তনের চিকিৎসা করিয়ে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছেন। প্রত্যেকের বেলায় বিশ্বের সর্বাধুনিক টিউলিপ লাইপোসাকশন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে যেটা পুরনো গধুড় পদ্ধতির চেয়ে সহজ ও নিরাপদ।

সর্বশেষ কথা : লাইপোসাকশনের কোনো কাটা-ছেঁড়ার দরকার নেই। এজন্য চামড়ার আধা ইঞ্চিরও কম ফুটো করা হয়। আর লাইপোসাকশনের পর হাসপাতালে অবস্থানের দরকার নেই। সকালে লাইপোসাকশন করে বিকালে বাসায় চলে যেতে পারে। রোগী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে স্বাভাবিক কাজে ফিরে যেতে পারে। মেদ অপসারণ স্থানে কিছুদিনের জন্য শক্ত শক্ত ভাব অনুভূত হতে পারে। তবে কিছুদিনের মধ্যে তা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে যায়। বিদেশের তুলনায় আমাদের দেশে লাইপোসাকশন খুব ব্যয়বহুল ব্যাপার নয়। প্রায় সবার ক্ষমতার মধ্যেই শরীরের বাড়তি মেদ অপসারণের এ সর্বাধুনিক পদ্ধতির ব্যয়।

অধ্যাপক ডা. সাঈদ আহমেদ সিদ্দিকী
এফসিপিএস, (সার্জারি) এফআরসিএস (গ্লাসগো) এবং এফআইসিএস (ইউএসএ), এফএসিএস (ইউএসএ)
প্লাস্টিক সার্জন
কসমেটিক সার্জারী সেন্টার লিঃ
শংকর প্লাজা (৫ম তলা)
৭২, সাত মসজিদ রোড, ধানম-ি, ঢাকা

জেনারেল স্বাস্থ্য
শিশু স্বাস্থ্য
For Ad
নারী স্বাস্থ্য
পুরুষ স্বাস্থ্য

যেভাবে ইবোলা ভাইরাস ছড়ায়
সাম্প্রতিক রোগ
বদভ্যাসে কিডনি বেহাল
শিশুর ওষুধ সেবনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
শিশু স্বাস্থ্য
শিশুর বমি
শিশুদের জন্মগত হৃদরোগ
পুরুষের যৌন প্রবৃত্তি বাড়ায় মসলাদার খাবার
জোড়ার আঠালো পদার্থ শুকিয়ে গেলে
ফুসফুস ক্যানসার চিকিৎসায় ‘মাইলফলক’
ত্বকে ক্রিম লাগাবেন যেভাবে
তিন লিটার পানি বয়স কমাল ১০ বছর
গর্ভবতী মা কখন ও কতবার যাবেন চিকিৎসকের কাছে?
খাদ্য ও পুষ্টি
গরমে লেবুর সরবত
রোজায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিছু টিপস
রক্তের চর্বি কমানোর জন্য খাদ্যের নিয়ম
কলেরা প্রতিরোধে কম দামি সফল টিকা
হঠাৎ বৃষ্টি ও গরমে ঠান্ডা-জ্বর হলে কি করবেন
কৃমিনাশক ওষুধ সেবনের উত্তম যে সময়
রোজাদার রোগীদের ওষুধপথ্য ও সতর্কতা অবলম্বন
অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধের ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
আদা
প্রশ্নোত্তর : রক্তচাপ
আপনার প্রশ্ন বিশেষজ্ঞের উত্তর
প্রশ্নোত্তর- বিষয়: কিডনি রোগ
হাততালিও হতে পারে প্রতিদিন সুস্থ থাকার হাতিয়ার
প্রতিনিয়ত দাঁতের ক্ষতি যেভাবে করি
গরমে স্বাস্থ্য- সচেতনতা
মস্তিষ্কে কি ঘটে, যখন নারী মাতৃত্ব লাভ করেন
একরাতেই ব্রণ দূর করার কৌশল
মরণব্যাধি ক্যান্সারের যে ১০ টি সতর্কীকরণ ল¶ণ অবহেলা করবেন না
দীর্ঘ ভ্রমণে স্বাস্থ্য সতর্কতা
ভ্রমণে স্বাস্থ্য সতর্কতা
টিনএজারদের ব্রণ সমস্যা ত্বকের সৌন্দর্যহানীর জন্য দায়ী
স্ক্যাবিস বা চুলকানি প্রতিরোধে করণীয়
ত্বকের যেসব রোগে চিকিৎসা একান্ত দরকার
হৃদরোগ প্রতিরোধে আপনি যা করবেন
হৃদরোগ প্রতিরোধে আপনি যা করবেন
প্রচন্ড গলাব্যথা ও টনসিলে ইনফেকশন
নাক-কান-গলার ক্যান্সার হতে সতর্ক ও সাবধান হওয়া
হঠাৎ কানের পর্দায় আঘাত পেলে
পেপটিক আলসারের আদ্যোপান্ত
অ্যালার্জি ও হাঁপানির থেকে পরিত্রাণ
কাশি যখন সমস্যা
দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের অন্যতম কারণ যখন রেটিনা
চোখের নিচের কালো দাগ কমানোর উপায় (১১ অক্টোবর বিশ্ব দৃষ্টি দিবস)
চোখ উঠলে যা করবেন
শীতকালে হাটুর ক্ষতি এড়াতে ১০টি বিষয় জেনে নিন
ঘাড়, মাথা ও বুক ব্যথার লক্ষণ ও চিকিৎসা
সকল প্রকার ব্যথায় কী বাত?
লিভার ডিজিজের অন্যতম ভয়াবহ কারণ এলকোহল
জানুন যকৃতের জন্য ভালো ও মন্দ খাবার কী
ভাইরাল হেপাটাইটিস একটি জটিল ও নিরাময়যোগ্য রোগ (২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস)
প্রশ্নোত্তরে মানসিক রোগ সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ জেনে নিই। (১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস)
হয়তো আপনার ঘরেই আছে সিজোফ্রেনিয়া রোগী
সিজোফ্রেনিয়া একটি অন্যতম মানসিক রোগ (১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস)
হাত-পায়ে জ্বালাপোড়া অনুভব করলে করণীয়
গেঁটে বাত হলে কী করবেন?
বার্ধক্যে যত ব্যথা-বেদনা
জেনে শুনে যেভাবে দাঁতের ক্ষতি করছেন