সিজোফ্রেনিয়া একটি জটিল দীর্ঘমেয়াদি মানসিক রোগ। গায়েবি আওয়াজ শোনা, ভ্রান্ত বিশ্বাস করা এই রোগের লক্ষণ। প্রশ্নোত্তরে ঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের ইউনিট-প্রধান হিসেবে কর্মরত ডা. সালাহ উদ্দিন কাউসার বিপ্লব।
প্রশ্ন : সিজোফ্রেনিয়া আসলে কী।
উত্তর : সিজোফ্রেনিয়াকে কেউ কেউ স্কিজজোফ্রেনিয়াও বলে। আসলে স্কিজ একটি জার্মানি শব্দ। এর মানে হলো ছিঁড়ে যাওয়া। মনের যে অনেকগুলো দিক রয়েছে, এই রোগে কিছু কিছু কোম্পোনেন্টের সঙ্গে কিছু কিছু কোম্পোনেন্টের যোগাযোগ আর থাকতে চায় না। এই জন্য নামকরণ এরকম যে সিজোফ্রেনিয়া।
প্রশ্ন : এই সমস্যাটির মধ্য দিয়ে যাঁরা যান, তাঁদের প্রাথমিক পর্যায় থেকে কী হয়।
উত্তর : এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। এই রোগে যিনি ভুক্তভোগী, তার কপাল খারাপই বলতে হবে। সাধারণত ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সে শুরু হয়। পরে যে হয় না, সেটি নয়, তবে এই বয়সেই বেশি শুরু হয়। এই রোগের বড় লক্ষণ হলো কানে গায়েবি কথা শোনে। আমরা বলি হ্যালুসিনেশন। হ্যালুসিনেশন মানে হলো যে জিনিসের উপস্থিতি নেই, একেবারে অনুপস্থিত এটিকে সে অনুভব করে। এটা যে কেবল কানে তা নয়। চোখেও হতে পারে, শরীরে কেউ স্পর্শ করছে এমন মনে হতে পারে। এমনকি গন্ধ স্বাদ যেকোনো বিষয়ে এটি হতে পারে। যেই জিনিস একেবারে অনুপস্থিত একে সে অনুভব করে। যিনি অনুভব করেন এটি, সে কিন্তু সত্যি মনে করেন আমার সামনে কেউ বসা। হয়তো অন্য কেউ দেখছে তার এটি নেই। এই যে কথা বলতে বলছে, এ ক্ষেত্রে প্রথমে কেউ বসা সে সেটি দেখছে, তার সঙ্গে আলাপচারিতা করে। এই জন্য আমরা অনেক সময় দেখি বিড়বিড় করে কথা বলে, সে এটা বলে তিনি কিন্তু সত্যি মনে করে বিষয়টিকে।
আরেকটি জিনিস হলো, সিজোফ্রেনিয়ার একটি ভ্রান্ত বিশ্বাস রয়েছে। এই বিশ্বাসটি ভুল, তবে অত্যন্ত শক্ত, তবে কোনো ব্যাখ্যা করা যায় না। ধর্ম দিয়ে হোক বা বিশ্বাস দিয়ে হোক, এর ব্যাখ্যা করা যায় না। ধরেন আমি কারওয়ান বাজার মোড়ে হাঁটছি, চারদিকে সব মানুষ এসব নিয়ে কথা বলছে। এর তো কোনো ব্যাখ্যা নেই। সবাই কেন আমাকে নিয়ে কথা বলবে? যখন কেউ একজন তারকা হয়, তাহলে হয়তো কথা বলতে পারে। তবে একজন সাধারণ মানুষকে নিয়ে তো কেউ কথা বলবে না। অথবা আমার বিরুদ্ধে কথা বলছে। অথবা কেউ একজন জাপানে বসে আমার কথা শুনে ফেলছে। অথবা এমন একটি বিশ্বাস যেটা ব্যাখ্যা করা যায় না।
আমরা অনেকে এই বিশ্বাস বা ব্যাখ্যাগুলোকে বোঝানোর চেষ্টা করি। এটা তুমি এভাবে করবে না। ওভাবে করবে। যেটা আসলে সত্যি না। এটা কখনো কোনো ব্যাখ্যাতে যাবে না। এর চিকিৎসা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। মূলত এর চিকিৎসা হলো ওষুধ। সাইকোথেরাপির এখানে খুব বেশি ভূমিকা নেই। তবে পরে রোগ সম্পর্কে বোঝানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রয়েছে। ৯৭ ভাগ সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ধারণাই থাকে না যে আমার একটি রোগ আছে। তার একটি মানসিক রোগ আছে, সে সেটি বিশ্বাস করে না। তাই আমি যখন ব্যাখ্যা করব বা বোঝানোর চেষ্টা করব সেটা কাজ হবে না। মূল চিকিৎসাই হলো ওষুধ।
আরেকটি বিষয় বলে রাখা দরকার ওষুধ ও চিকিৎসার বিষয়ে অনেক ধারণা রয়েছে। সেটা ভুল কি সত্যি অনেকভাবে বলা যায়।
যেমন মানসিক রোগের চিকিৎসকদের সম্পর্কে একটি ধারণা, তারা ঘুমের ওষুধ দিয়ে সারা বছর ঘুম পাড়িয়ে রাখে। বা একবার ঘুমের ওষুধ খাওয়া শুরু করলে আর ছাড়তে চায় না। এই জন্য চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগ্রহ কমে যায়। সিজোফ্রেনিয়া এমন একটি রোগ যার এক-চতুর্থাংশ ভালো হয়ে যায়। এক ভাগ একেবারেই ভালো হয় না। বাকি যে ৫০ ভাগ, ভালো হতে থাকে, আবার খারাপ হতে থাকে। এর চিকিৎসা ওষুধ ছাড়া আর কিছু নয়। যখন একটি রোগ লম্বা সময় ধরে চলতে থাকে, এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা যাঁরা দেন, তাঁদের হাতেও কিছু থাকে না। অনেকে ভাবেন চিকিৎসা করতে করতে হয়তো অসুস্থ হয়ে গেল। এটা আসলে সত্যি নয়।
তার ভ্রান্ত বিশ্বাসের কারণে যখন চলতে, কাজের ক্ষেত্রে সব জায়গায় সমস্যা হয়, সেটা কমানোর জন্য আসলে এই চিকিৎসা ছাড়া উপায় নেই। চিকিৎসা যদি না করে এগ্রেসিভ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এটা নিজের জন্য যেমন ক্ষতিকর, অন্যের জন্যও ক্ষতিকর। তাই চিকিৎসা আসলে চালিয়ে যেতে হবে।
সূত্র: এনটিভি স্বাস্থ্য প্রতিদিন (পর্ব-২৫৫২)
©2014 Copyright by Micron Techno. All rights reserved.