শীত এলো, সেই সঙ্গে বাড়ছে ঠাণ্ডা বা সর্দি-কাশির প্রকোপ। কমন কোল্ড সম্পর্কে অনেকের ভয় রয়েছে, আবার অনেকের মাঝে রয়েছে ভ্রান্ত ধারণা। জেনে নেওয়া যাক সর্দি-কাশির কারণ ও প্রতিকার।
কমনকোল্ডবাসর্দি-কাশিকেনহয়?
শীতকালে ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সর্দি কাশির প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। প্রায় ২০০-এর বেশি ভাইরাস এ সংক্রমণের জন্য দায়ী। যার মধ্যে রাইনোভাইরাস অন্যতম। ভাইরাস একজন মানুষ থেকে আরেকজনের শরীরে সহজেই ছড়াতে পারে। এ ছাড়া শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে, কমন কোল্ডের জন্য দায়ী ভাইরাসগুলো কম আর্দ্রতায় অধিক হারে বংশবৃদ্ধি করে। একজন আক্রান্ত হলে তার নিকটজনও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার্য বস্তু স্পর্শ করলে সেখানেও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এ ভাইরাস ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এ সময়ের মধ্যে অন্য কেউ সেই বস্তু স্পর্শ করায় আক্রান্ত হতে পারেন। তাই পরিবারের সবাই ব্যবহৃত বস্তু যেমন— জগ, গ্লাস, পানির কল ইত্যাদি ব্যবহারের পূর্বে ভালোভাবে ধুয়ে নিন অথবা ব্যবহারের পর হাত ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় রুমাল বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ভালোভাবে ঢেকে নিন এবং পরবর্তীতে ভালোভাবে হাত ধুয়ে ফেলুন। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় রুমাল বা টিস্যু যদি না থাকে তবে খালি হাত ব্যবহারের পরিবর্তে হাতের কনুই বাঁকা করে নাক-মুখ ঢেকে নিন, এটি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ, কেননা কনুইয়ের ব্যবহার একেবারেই কম।
কমনকোল্ডবাসর্দি-কাশিনিরাময়েঅ্যান্টিবায়োটিককতখানিকার্যকর?
অ্যান্টিবায়োটিক এমন একটি ওষুধ যা তৈরি করা হয়েছে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে সৃষ্ট অসুখ নিরাময়ের জন্য। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া নিরাময়ে কার্যকর ওষুধ কিন্তু ভাইরাস নিধনে বা ভাইরাস সংক্রমণে সৃষ্ট অসুখ নিরাময়ে এর কোনো কার্যকর ভূমিকা নেই। কমন কোল্ড বা সাধারণ সর্দি-কাশি ভাইরাস জনিত রোগ হওয়ায় এটি নিরাময়েও এন্টিবায়োটিকের কোনো কার্যকর ভূমিকা নেই। তাই কমন কোল্ড নিরাময়ে কোনো ধরনের এন্টিবায়োটিক গ্রহণ না করাই ভালো। অপ্রয়োজনে এন্টিবায়োটিক গ্রহণ এবং সঠিক নিয়ম না মানলে রেজিস্টেন্স তৈরি হয়, যা পরবর্তীতে ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় এবং চিকিৎসায় বিঘ্ন ঘটায়। তবে সর্দি-কাশির সঙ্গে তীব্র জ্বর অনুভব করলে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।
কমনকোল্ডবাশীতকালেসর্দি-কাশিনিরাময়েরঘরোয়াটোটকা :
শীতকালে বেশি করে তরল খাবার খান। যেমন— কুসুম গরম পানি, আদা চা, ফলের জুস পান করলে নাক বন্ধ হওয়া ভাব থাকবে না। দৈনিক ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এ ছাড়া গরম স্যুপেও উপকার পাবেন।
স্টিম বা গরম পানির ভাপ নিতে পারেন। এক গামলা গরম পানি নিয়ে নাক দিয়ে বাষ্প টানুন, এতে করে নাক বন্ধ হয়ে থাকা এবং নাক দিয়ে পানি পড়া কমবে। তবে সাবধান থাকবেন বাষ্প অতিরিক্ত বা অসহ্য গরম মনে হলে ধীরে ধীরে টানুন। গরম পানিতে সামান্য মেনথল মিশিয়ে নিলে উপকার পাবেন।
শীতকালে শরীর উষ্ণ রাখতে গরম জামা বা কম্বল গায়ে জড়িয়ে রাখুন।
গরম পানিতে গড়গড়া করুন। এক গ্লাস গরম পানিতে আধা চামচ লবণ মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে গড়গড়া করুন, এতে করে গলার খুসখুসে ভাব কমবে।
লেবুর রস এবং মধু মিশ্রিত পানি দিয়ে গড়গড়া করুন। দুই কাপ গরম পানিতে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস এবং ১ চা চামচ মধু মেশান, মিশ্রণটি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ঠাণ্ডা করে সেটি দিয়ে গড়গড়া করুন।
উষ্ণ তরল পান করুন। গরম চায়ের সঙ্গে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। এতে শ্বাস-প্রশ্বাস চলাচলের পথ পরিষ্কার হবে।
শীতকালে পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ করুন।
গরম পানি দিয়ে গোসল করুন।
কমনকোল্ডসর্দি-কাশিপ্রতিরোধেরউপায় :
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন। নিয়মিত সঠিক নিয়মে হাত ধুয়ে নিন। এতে কমন কোল্ডে আক্রান্ত হওয়ার এবং ভাইরাস ছড়ানোর সুযোগ কম থাকে। নিজেকে যথাসম্ভব মানসিক চাপমুক্ত রাখুন এবং স্ট্রেস দূর করার জন্য এক্সারসাইজ করুন।