মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন মন নাকি শরীর নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাই মন ভালো রাখা জরুরি।মন ভালো না থাকলে আপনার সব কাজেই বাঁধবে হেরফের।সবকিছু থাকবে অগোছালো,কাজের ফলাফল হবে শূন্য। তাই মন ও মানসিক অবস্থা ভালো রাখা জরুরি।
সম্প্রতি একটি মানসিক রোগ বেশ প্রভাব বিস্তার করেছে সেটি হলো সিজোফ্রেনিয়া।অতিরিক্ত মানসিক চাপ, বংশগত কারণ, মস্তিষ্কের সংক্রমণ, আঘাতজনিত কারণ ছাড়াও বিভিন্ন কারণে হতে পারি রোগটি। রোগটি সম্পর্কে ভালো না জানয় আপনার ঘরেই এই রোগী থাকলেও আপনি বুঝতে পারবেন না।আর সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগী সে কখনওই বুঝেই না সে অসুস্থ। তাই এক্ষেত্রে পরিবারের সচেতন হওয়া প্রয়োজন সবার আগে।
সিজোফ্রেনিয়া কী?
সিজোফ্রেনিয়া একটি জটিল মানসিক রোগ।সিজোফ্রেনিয়া শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক শব্দমূল Skhizein (to Split বা বিভক্ত করা) এবং phrenos (mind বা মন) থেকে। এ রোগের লক্ষণ হচ্ছে চিন্তাধারা (প্রত্যক্ষণ, চিন্তন) এবং অনুভূতি প্রকাশের মধ্যে সঙ্গতি না থাকা। এতে মনের স্বাভাবিকতা হারিয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের বিঘ্ন ঘটে। রোগাক্রান্তের পরিবার এবং পরিচিতরা সমস্যায় পড়ে যান রোগীর অদ্ভুত আচরণ দেখে। তাদের সঙ্গে মানিয়ে চলাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এই রোগকে অনেক সময় মানসিক রোগের ক্যান্সার হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।
ডা. মোহিত কামাল বলেন, সিজোফ্রেনিয়া মূলত মস্তিষ্কের রোগ।মস্তিষ্কে সমস্যা, বংশগত কারণসহ একাধিক কারণে এই রোগ হতে পারে।পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজনদের প্রতি ভ্রান্ত বিশ্বাস, অহেতুক সন্দেহপ্রবণতা (ডিল্যুশন), অবাস্তব চিন্তাভাবনা, হ্যালুসিনেশন (অলীক প্রত্যক্ষণ), অসংলগ্ন কথাবার্তা ইত্যাদি সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ। আর দীর্ঘমেয়াদি লক্ষণ হচ্ছে অনাগ্রহ, চিন্তার অক্ষমতা, আবেগহীনতা, বিচ্ছিন্নতা।
তিনি বলেন, সিজোফ্রেনিয়া রোগীরা কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না।সে মনে করে তাকে নিয়ে অনেকে ষড়যন্ত্র করছে মেরে ফেলার জন্য।অনেক সময় খাবারও খেতে চায় না।কারণ সে ভাবে ভাতের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তাকে মেরে ফেলা হতেপারে।
তিনি আরও বলেন, সিজোফ্রেনিয়া রোগ ও রোগী সম্পর্কে আমাদের অনেকেই জানে না। এজন্য কারও ঘরে রোগী থাকলে কেউ বুঝতে পারে না।এই রোগ সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি।
কীভাবে বুঝবেন কেউ সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে, আসুন জেনে নেই প্রাথমিক কিছু বিষয়।
অবিশ্বাস: সিজোফ্রেনিয়ার রোগীরা কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না।এই রোগীরা কাউকে দেয়া খাবার খেতে চান না। সে ভাবে তাকে খাবারে সঙ্গে বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলা হতে পারে।
আবেগপ্রবণ: এই রোগীরা খুবই আবেগপ্রবণ হয়।বাচ্চাদের মতো আচারণ করে।অনেক সময় কান্নাও করে থাকে।
ষড়যন্ত্র: সিজোফ্রেনিয়ার আক্রান্ত রোগী মনে করে তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।তার স্বামী,সন্তান ও তাকে মেরে ফেলা জন্য আশপাশের লোকেরা ষড়যন্ত্র করছে।
নিজেনিজেকথাবলা: সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগী নিজে নিজের কথা বলে ।সে তার কল্পনায় মনে করে তার পাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।তার সঙ্গে সে কথা বলছে।
অহেতুকসন্দেহকরা: সিজোফ্রেনিয়ার রোগীরা বিনা কারণে অন্যকে সন্দেহ করে।এই ধরনের রোগীদের পাশে দাঁড়িয়ে যদি তিন থেকে চারজন কথা বলে তবে সে মনে করে তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। চারপাশের সবাই তার প্রতি ষড়যন্ত্র করছে এবং গোপনে তার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে৷
হঠাৎকানেকোনোআওয়াজশুনতেপাওয়া: সিজোফ্রেনিয়ার রোগীরা অনেক সময় কানে অনেক ধরনের নাম ধরে ডাকা বা কথা বলার আওয়াজ শুনতে পান। কিন্তু আসলেই তা আওয়াজ ছিল না।এটি তার মস্তিষ্ক বিকৃতির কারণে হয়ে থাকে।
চিন্তাশক্তিনষ্টহয়েযায়: সিজোফ্রেনিয়ার রোগীদের স্বাভাবিক মানুষের মতো চিন্তা করার কোনো শক্তি থাকে না।এ ধরনের রোগীদের সুস্থ ধারার চিন্তাশক্তি নষ্ট হয়ে যায়।
অবচেতনমনেরভয়: সিজোফ্রেনিয়ার রোগীরা সব সময় প্রাণনাশের ভয়ে থাকে।তাকে ও তার পরিবারকে হত্যা করা হবে। এ ধরনের চিন্তা সব সময় তার মস্তিষ্কের মধ্যে ঘুরতে থাকে।