স্বাস্থ্য বার্তা

শিশু-কিশোরদের হরমোন ঘাটতিজনিত রোগবালাই

অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির হরমোনের ঘাটতি হলে তাকে অ্যাড্রেনাল ইনসাফিসিয়েন্সি বলা হয়। এটি খুব বেশি লোকের দেখা যায় না। মূলত এডিসন ডিজিজকেই এ দলের প্রধান রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গ্লুকোকর্টিকয়েড হরমোন ঘাটতির জন্য যে শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়, তাকে এডিসন ডিজিজ বলা হয়। এডিসন ডিজিজ দু’রকম হয়, যেমন-

  • প্রাইমারি : অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির নিজস্ব সমস্যার কারণে গ্লুকোকর্টিকয়েড উৎপাদন কমে গেলে এটি হতে পারে।
  •  হাইপোথ্যালামাস অথবা পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যার কারণে গ্লুকোকর্টিকয়েড উৎপাদন কমে এডিসন ডিজিজ হতে পা।
সামগ্রিক কারণগুলোকে আবার জেনেটিক অথবা পরে কোনোভাবে শুরু হওয়া এভাবে ভাগ করা যায়। জন্মের পর কোনো এক সময় যে কারণগুলো অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, সেগুলোর মধ্যে আছে অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির টিবি, হিস্টোপ্লাসমোসিস ও টিউমার।
 
লক্ষণ: লক্ষণের সংখ্যা ও তীব্রতা নির্ভর করে কতদ্রুত বা কী হারে গ্লুকোকর্টিকয়েডের ঘাটতি হয়েছে তার উপরে। সাধারণভাবে যে লক্ষণগুলো বেশি দেখা যায় তা হল-

  •  দীর্ঘদিন কোনো লক্ষণ না দেয়া।
  • অনির্দিষ্ট শারীরিক দুর্বলতা বা খারাপ লাগা।
  • হঠাৎ করে রক্তচাপ কমে গেছে এমন লক্ষণ দেখা দেয়া।
  • রোগীর অ্যাড্রেনাল ক্রাইসিস নামক মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে যাতে অতিদ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে রোগীর চিকিৎসা করা না হলে মৃত্যুও হতে পারে।
 যে লক্ষণগুলো সরাসরি গ্লুকোকর্টিকয়েড ঘাটতির জন্য হয়-
  • রক্তচাপ কমে যাওয়া
  • হঠাৎ করে পেটে ব্যথা হওয়া
  • বমি হওয়া
  • জ্বর বা জ্বর জ্বর ভাব
  • রক্তের গ্লুকোজ কমে যাওয়া
    অনেক রোগী দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যায় ভুগে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দুর্বলতা বা খারাপ লাগা, ক্রমে দৈহিক ওজন কমতে থাকা বা শুকিয়ে যাওয়া, ক্ষুধা-মন্দা, বমিবমি ভাব বা মাঝে মাঝে বমি হওয়া, পেটে ব্যথা ব্যথা ভাব, মাংশপেশিতে ব্যথা বা কামড়ানো ভাব, অস্থিসন্ধির হালকা ব্যথা, লবণ খাওয়ার প্রতি অতি আগ্রহ, রক্তের গ্লুকোজ কমে গিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়া (খুব কম বয়সীদের বেশি হয়) ইত্যাদি।
 
একটি লক্ষণ অ্যাড্রেনাল ইনসাফিসিয়েন্সির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা হল- গায়ের রং ক্রমে কালো হয়ে যাওয়া। বিশেষত: শরীরের যে অংশে রোদ পড়ে, যেমন- হাত-পা, হাত-পায়ের তালুর রেখাগুলোতে, দাঁতের মাড়ি, মুখের ভিতরের উপরের তালু, যৌনাঙ্গের স্তনের অ্যারিউলা ইত্যাদি।
 
বালিকাদের ক্ষেত্রে মাসিক শুরু না হওয়া ও মাসিক শুরুর পূর্ববর্তী লক্ষণগুলোর অনুপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। অটোইমিউনিটি থাকলে সে ক্ষেত্রে অন্য অটোইমিউইউন রোগগুলো একই সঙ্গে বিরাজমান থাকতে পারে।  যদি পিটুইটারি বা হাইপোথ্যালামাসের কারণে অ্যাড্রেনাল ডিজিজ হয়ে থাকে, তাহলে এ লক্ষণগুলো অনেক সময় অনুপস্থিত থাকতে পার।

রোগ শনাক্তকরণ: শুরুতেই রোগীর পরিপূর্ণ শারীরিক লক্ষণাদির মূল্যায়ন করতে হবে। এটি রোগ নির্ণয়ের ভিত্তি স্থাপন করে দিতে পারে। এরপর দৈহিক ওজন, উচ্চতা, গায়ের রঙের পরিবর্তন ইত্যাদি শনাক্ত করতে হবে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা: সর্ব প্রথম যে পরীক্ষাটি করা যায়, তা হল- সকাল বেলার রক্তে কর্টিসলের পরিমাপ নির্ধারণ। এটি যদি নির্দিষ্ট পরিমাণের উপরে থাকে, তা হলে অ্যাড্রেনাল ইনসাফিসিয়েন্সি থাকার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। আবার কর্টিসলের পরিমাণ খুব কম হলে অ্যাড্রেনাল ইনসাফিসিয়েন্সির আশংকা বেড়ে যায়।
 
যদি মাঝামাঝি হয় তাহলে পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগ নির্ধারণ করা হয়। সে ক্ষেত্রে Short Synacthen টেস্টটি খুব নির্ভরযোগ্য। অনেক সময়ই পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম অনেক তথ্য দিতে পারে। তবে পেটের সিটি স্ক্যান অনেক ভালো পরীক্ষা। যখন রক্তের কর্টিসল দেখা হয়, একই সঙ্গে এসিটিএইচ দেখাটাও প্রয়োজন।
 
কোনো কোনো ক্ষেত্রে পিটুইটারি ও থ্যালামাসের হরমোনগুলো পরিমাপ করার প্রয়োজন হয়। মাথার এমআরআই করেও অনেক সময় পিটুইটারি বা থ্যালামাসের অবস্থা জানার চেষ্টা করা হয়।
 
চিকিৎসা: অ্যাড্রেনাল ক্রাইসিস একটি জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা। এটিকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করতে হবে। অনেক সময় রোগীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয় (ICU Support)।
যাদের শারীরিক অবস্থা অতটা মারাত্মক নয়, তাদেরকে বাসায় রেখেই চিকিৎসা করা যেতে পারে। যেহেতু রোগটি হয়েছে গ্লুকোকর্টিকয়েড এর ঘাটতির কারণে, সেহেতু গ্লুকোকর্টিকয়েড সরবরাহ করাই চিকিৎসার প্রধান পদ্ধতি।
 
শুরুতে গ্লুকোকর্টিকয়েড ইনজেকশন হিসেবে দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এটিকে মুখে খাবার ট্যাবলেট হিসেবে আজীবন চালিয়ে যেতে হয়। রোগীদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর পর চিকিৎসকের কাছে ফলো-আপে আসতে হবে। অনেক রোগী শারীরিক অবস্থা ভালো থাকায় ফলো-আপের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, কিন্তু এটি তার জন্য খুব মারাত্মক হতে পারে।


সতর্কতা: অ্যাড্রেনাল ইনসাফিসিয়েন্সির রোগীকে সাধারণত একটি কার্ড দেয়া হয়, যাতে তার রোগ জরুরি স্বাস্থ্য সমস্যায় করণীয় বিশেষ প্রয়োজনে কর্টিসল ইনজেকশন দেয়া ইত্যাদি তথ্য সন্নিবেশিত থাকে। রোগীর নিজের ও পরবর্তীতে যে চিকিৎসক দেখবেন, তার জন্য এ তথ্যগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক দেশে এসব রোগীকে কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষিত তথ্য বা ডাটায় সংযুক্ত করা থাকে যা যে কোনো জায়গায় এ রোগীটি চিকিৎসা নিতে গেলে সহায়ক হয়।
 
লেখক : সহকারী অধ্যাপক,
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ,
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

জেনারেল স্বাস্থ্য
শিশু স্বাস্থ্য
For Ad
নারী স্বাস্থ্য
পুরুষ স্বাস্থ্য

যেভাবে ইবোলা ভাইরাস ছড়ায়
সাম্প্রতিক রোগ
বদভ্যাসে কিডনি বেহাল
শিশুর ওষুধ সেবনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
শিশু স্বাস্থ্য
শিশুর বমি
শিশুদের জন্মগত হৃদরোগ
পুরুষের যৌন প্রবৃত্তি বাড়ায় মসলাদার খাবার
জোড়ার আঠালো পদার্থ শুকিয়ে গেলে
ফুসফুস ক্যানসার চিকিৎসায় ‘মাইলফলক’
ত্বকে ক্রিম লাগাবেন যেভাবে
তিন লিটার পানি বয়স কমাল ১০ বছর
গর্ভবতী মা কখন ও কতবার যাবেন চিকিৎসকের কাছে?
খাদ্য ও পুষ্টি
গরমে লেবুর সরবত
রোজায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিছু টিপস
রক্তের চর্বি কমানোর জন্য খাদ্যের নিয়ম
কলেরা প্রতিরোধে কম দামি সফল টিকা
হঠাৎ বৃষ্টি ও গরমে ঠান্ডা-জ্বর হলে কি করবেন
কৃমিনাশক ওষুধ সেবনের উত্তম যে সময়
রোজাদার রোগীদের ওষুধপথ্য ও সতর্কতা অবলম্বন
অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধের ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
আদা
প্রশ্নোত্তর : রক্তচাপ
আপনার প্রশ্ন বিশেষজ্ঞের উত্তর
প্রশ্নোত্তর- বিষয়: কিডনি রোগ
হাততালিও হতে পারে প্রতিদিন সুস্থ থাকার হাতিয়ার
প্রতিনিয়ত দাঁতের ক্ষতি যেভাবে করি
গরমে স্বাস্থ্য- সচেতনতা
মস্তিষ্কে কি ঘটে, যখন নারী মাতৃত্ব লাভ করেন
একরাতেই ব্রণ দূর করার কৌশল
মরণব্যাধি ক্যান্সারের যে ১০ টি সতর্কীকরণ ল¶ণ অবহেলা করবেন না
দীর্ঘ ভ্রমণে স্বাস্থ্য সতর্কতা
ভ্রমণে স্বাস্থ্য সতর্কতা
টিনএজারদের ব্রণ সমস্যা ত্বকের সৌন্দর্যহানীর জন্য দায়ী
স্ক্যাবিস বা চুলকানি প্রতিরোধে করণীয়
ত্বকের যেসব রোগে চিকিৎসা একান্ত দরকার
হৃদরোগ প্রতিরোধে আপনি যা করবেন
হৃদরোগ প্রতিরোধে আপনি যা করবেন
প্রচন্ড গলাব্যথা ও টনসিলে ইনফেকশন
নাক-কান-গলার ক্যান্সার হতে সতর্ক ও সাবধান হওয়া
হঠাৎ কানের পর্দায় আঘাত পেলে
পেপটিক আলসারের আদ্যোপান্ত
অ্যালার্জি ও হাঁপানির থেকে পরিত্রাণ
কাশি যখন সমস্যা
দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের অন্যতম কারণ যখন রেটিনা
চোখের নিচের কালো দাগ কমানোর উপায় (১১ অক্টোবর বিশ্ব দৃষ্টি দিবস)
চোখ উঠলে যা করবেন
শীতকালে হাটুর ক্ষতি এড়াতে ১০টি বিষয় জেনে নিন
ঘাড়, মাথা ও বুক ব্যথার লক্ষণ ও চিকিৎসা
সকল প্রকার ব্যথায় কী বাত?
লিভার ডিজিজের অন্যতম ভয়াবহ কারণ এলকোহল
জানুন যকৃতের জন্য ভালো ও মন্দ খাবার কী
ভাইরাল হেপাটাইটিস একটি জটিল ও নিরাময়যোগ্য রোগ (২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস)
প্রশ্নোত্তরে মানসিক রোগ সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ জেনে নিই। (১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস)
হয়তো আপনার ঘরেই আছে সিজোফ্রেনিয়া রোগী
সিজোফ্রেনিয়া একটি অন্যতম মানসিক রোগ (১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস)
হাত-পায়ে জ্বালাপোড়া অনুভব করলে করণীয়
গেঁটে বাত হলে কী করবেন?
বার্ধক্যে যত ব্যথা-বেদনা
জেনে শুনে যেভাবে দাঁতের ক্ষতি করছেন