অ্যালার্জি ও হাঁপানির থেকে পরিত্রাণ
নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি-কাশি, ত্বকে চুলকানি—এগুলো অ্যালার্জির লক্ষণ। ধুলাবালি বা ঠান্ডায় শ্বাসকষ্ট, বুক হাপরের মতো ওঠানামা, বুকে শব্দ হওয়া হাঁপানির লক্ষণ। দুটিই শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা। একটি ঊর্ধ্ব শ্বাসনালি ও আরেকটি ফুসফুস–সংলগ্ন শ্বাসনালির রোগ। কিন্তু দুটি রোগ একে অপরের আত্মীয়। একই ব্যক্তির দুটি সমস্যা থাকা অস্বাভাবিক নয়, বরং যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা আছে, তাদের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ব্যক্তির হাঁপানি পরেও দেখা দিতে পারে। শ্বাসতন্ত্রের অতিসংবেদনশীলতাই মূলত এ দুটি রোগের কারণ।
ধুলাবালি, ফুলের রেণু, কার্পেট, পশুপাখির লোম, পাখনা বা মল, পোকামাকড়ের হুল বা কামড়, কসমেটিক, রাসায়নিক, ওষুধ, কিছু খাবার ইত্যাদি শরীরের সংস্পর্শে এলে হাঁচি-কাশি, চুলকানি শুরু হয়ে যেতে পারে অ্যালার্জি–আক্রান্ত ব্যক্তির। আর শ্বাসকষ্ট শুরু হয় হাঁপানি–আক্রান্ত রোগীর। সারা বিশ্বে এটি একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। ১০ থেকে ২৫ শতাংশ মানুষ এ ধরনের সমস্যায় ভুগছে।
কেবল হাঁপানি নয়, অ্যালার্জি–আক্রান্ত ব্যক্তির সাইনোসাইটিস, নাকে পলিপ, চোখে কনজাংটিভাইটিস জাতীয় রোগ হওয়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে। কখনো কখনো কোনো উপাদানের প্রতি অতিসংবেদনশীলতা থেকে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। তাই অ্যালার্জি যে খুব সাধারণ একটি রোগ, তা–ও নয়।
অ্যালার্জি–আক্রান্ত ব্যক্তিদের সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ করতে হবে, কোন ধরনের উপাদানের সংস্পর্শে এলে তাদের সমস্যা হয়। সেই সব বিষয় এড়িয়ে চলতে হবে। ঘরে ঝাড়পোঁছ, কার্পেট, পশুপাখি পালন তাদের জন্য নয়। গাড়ি বা কলকারখানার ধোঁয়া থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা উচিত। ধূমপান তো অবশ্যই বর্জনীয়। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ ব্যবহার ঠিক নয়। অ্যালার্জি ও হাঁপানি রোধে অনেক টোটকা, কবিরাজি প্রচলিত আছে। না জেনে, না বুঝে এগুলো ব্যবহার করলে ক্ষতি হতে পারে। মনে রাখতে হবে, এসব রোগ পুরোপুরি সেরে যায় না, কেবল নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তাই অ্যালার্জি বা হাঁপানি চিরতরে সারানো হয়—এজাতীয় বিজ্ঞাপনে কখনো প্রলুব্ধ হওয়া যাবে না।
ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান
বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ,
ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল