বাংলাদেশের প্রায় ৭০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস সাধারণত ৪ ধরনের হয়ে থাকে।
১. খুব দ্রুত উপসর্গ দেখায় এবং ইনসুলিনের অভাবে হয়।
২. ডায়াবেটিস খুব ধীরে শরীরে বাসা বাঁধে। কেবলমাত্র নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করানোয় তা নির্ণয় করা সম্ভব।
৩. অন্যান্য বিশেষ ধরনের ডায়াবেটিস, যেমন—মাত্রাতিরিক্ত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট ডায়াবেটিস।
৪. গর্ভকালীন ডায়াবেটিস।
উপসর্গ : ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ পাওয়া, ঘন ঘন তৃষ্ণা পাওয়া, খুব দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়া, হঠাৎ করে ওজন হ্রাস হওয়া, যৌনাঙ্গে নানা চুলকানি, ঝাপসা দৃষ্টি ইত্যাদি হলো ডায়াবেটিসের উপসর্গ।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কী কী করবেন?
মানুষের গ্রহণ করা খাবার থেকে শরীরে তৈরি হয় গ্লুকোজ, যা রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে যায়। তবে আক্রান্ত রোগীর শরীরে তৈরি হওয়া গ্লুকোজ সবটুকু শরীরে ব্যবহার হয় না। কিছু অতিরিক্ত গ্লুকোজ রক্তে মিশে থাকে। ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে রক্ত বেশি ঘন হয়ে যায়। এই ঘন রক্ত ক্ষতিগ্রস্ত রক্তনালির মধ্য দিয়ে চলাচল করতে বাধার সম্মুখীন হয়। এভাবে ক্রমশ রক্ত চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে রক্তের সঙ্গে প্রবাহিত অক্সিজেনও বন্ধ হয়ে যায়। আর শরীরের ভিতরের অনেক টিস্যুর অকাল মৃত্যু হয়। এভাবে শরীর অঙ্গহানির পথে এগোয় এবং নিয়ন্ত্রণ না করলে দ্রুত মৃত্যু ডেকে আনে। তবে সতর্ক হলে ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। আক্রান্ত হওয়ার পর নিয়ন্ত্রণ করার চেয়ে সচেতন হয়ে প্রতিরোধই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। গবেষণায় দেখা গেছে, ৭০ ভাগ আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব।
প্রতিরোধের উপায় : ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এড়াতে অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয় এবং চটলেট জাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ করুন, কেননা এসব খাবার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এর পরিবর্তে শাকসবজি এবং ফলমূলের দিকে নজর দিন। ফলমূল ও শাক সবজিতে থাকা প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট ও ফাইবার ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ুন। ব্যায়াম শরীরের চর্বি ও ওজন কমায় যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। ধূমপান, মদ্যপান পরিহার করুন, ডায়াবেটিস ও এর জটিলতা থেকে বেঁচে যাবেন।
ডায়াবেটিসের চিকিৎসা নিন
ডাক্তারের নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ডাক্তার কিছু ওষুধ, জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন এবং রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের কিছু উপদেশ দিয়ে থাকেন।
নিয়ন্ত্রণ করুন এবিসি
ডায়াবেটিস, কিডনি, চোখ, দাঁত, হূিপণ্ড, স্নায়ুসহ অনেক স্থানে প্রভাব ফেলে। তাই এবিসি নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। ‘এ’ হলো এইচবি এওয়ানসি, ‘বি’ হলো উচ্চ রক্তচাপ, ‘সি’ হলো কোলেস্টেরল বা চর্বি। ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরিমাপ করার জন্য যে পরীক্ষাটি বেশি করেন, তা হলো নাশতার আগে ও নাশতার ২ ঘণ্টা পর রক্ত পরীক্ষা। তবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা গত দুই-তিন মাসে কেমন ছিল তা সঠিকভাবে এ পরীক্ষায় আসে না। প্রয়োজন এইচবি এওয়ানসি পরীক্ষা। এটি রক্তের একটি টেস্ট, যা গত দুই-তিন মাসের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার গড় পরিমাণ নির্দেশ করে। এওয়ানসি সাত শতাংশের নিচে থাকা মানে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে।
ডায়াবেটিস রোগীর বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়, যেমন—নার্ভ বা স্নায়ুর ক্ষতি, চোখ ও কিডনির সমস্যা, হূদরোগ ও স্ট্রোক। ডায়াবেটিস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এগুলো সৃষ্টি হয় না। শরীরের নিয়মিত যত্ন নিয়ে এগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ডা: ইন্দ্রজিৎ প্রসাদ
ল্যাব এইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা
©2014 Copyright by Micron Techno. All rights reserved.