বার্ধক্য কোনো রোগ নয়। এটা জীবনের একটি প্রক্রিয়া। বর্তমানে বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে, যার ফলে বয়স্ক ব্যক্তি বা প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যাও বেড়েছে। আর এই প্রবীণ জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই বয়সজনিত হাড়ের ক্ষয় রোগে আক্রান্ত। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যেমন চুল পেকে যায়, তেমনি হাড়ের ক্ষয়ও বাড়তে থাকে। বিশেষ করে নারীদের মেনোপেজ পরবর্তী সময়ে হাড়ের ক্ষয় দ্রুত হতে থাকে। হাড়ের ক্ষয় ছাড়াও জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির অভ্যন্তরীণ উপাদান যেমন- সাইনোভিয়াল ফ্লুইডও কমে, যার ফলে শরীরের জয়েন্টগুলোতে ব্যথা-বেদনা দেখা দেয়। বিশেষ করে মেরুদণ্ড, ঘাড়, কোমর, হাঁটু, কাঁধ ইত্যাদিতে বেশি ব্যথা দেখা যায়। যা মেডিকেলের পরিভাষায় স্পনডাইলোসিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে।
স্পনডাইলোসিস : এটি মেরুদণ্ডের হাড় বা কশেরুকার ক্ষয়জনিত রোগ। আমাদের মেরুদণ্ড সবচেয়ে বেশি নড়াচড়া হয় দুটি অংশে- ঘাড় বা সারভাইক্যাল স্পাইন ও কোমর বা লাম্বার স্পাইন। এর ফলে মেরুদণ্ডের এ অংশে হাড়ের ক্ষয়ও বেশি হয়ে থাকে।
অস্টিওআর্থ্রাইটিস :এটি একটি অস্থিসন্ধির ক্ষয়জনিত রোগ। আমাদের অস্থিসন্ধি বা জয়েন্ট এক ধরনের নরম কাভার দ্বারা আবৃত থাকে, যাকে মেডিকেলের ভাষায় কারটিলেজ বলে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কারটিলেজগুলো ক্ষয় হতে থাকে, জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির মার্জিন অমসৃণ হয়ে যায়। এ ছাড়া অস্থিসন্ধির গ্যাপ (দূরত্ব) কমে যায়, যার ফলে অস্থিসন্ধি নাড়াচাড়া করতে ব্যথা অনুভূত হয়।
অস্টিওপোরোসিস : অস্টিওপোরোসিস বা অস্থি ক্ষয় বা হাড়ের ক্ষয় রোগ এমন একিটি অসুখ- যার ফলে হারের ঘনত্ব নির্দিষ্ট মাত্রায় কমে যায়। এতে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। ২০-৩৫ বছরে হাড় তার পূর্ণতা লাভ করে, আর ৪০ বছরের পর থেকে হাড় তার ক্যালসিয়াম ও ফসফেট হারাতে থাকে। এতে হাড়ের পরিবর্তন হয়। হয়ে যায় দুর্বল ও ভঙ্গুর। ৫০ বছর বয়সে ১৫ ভাগ এবং ৭০-৮০ বছর বয়সে ৩০ ভাগ নারীর হিপ বোন বা নিতম্বের হাড় ভেঙে যায়।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিশ্বে ৫০ বছরের অধিক বয়সের প্রতি ৩ জন নারীর মধ্যে একজন এবং প্রতি পাঁচজন পুরুষের একজনের অস্টিওপোরোসিস হয়। এই ব্যথার ফলে রোগীরা ব্যক্তিগত কাজকর্মও করতে পারেন না। যেমন- বসা থেকে উঠতে পারেন না, নিচে বসতে পারেন না, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে পারেন না কিংবা টয়লেটে বসতে পারেন না। এ সমস্যাগুলোর চিকিৎসায় এ ওষুধগুলোর সাহায্য নেয়া যেতে পারে- এনএসআইডি, এসডায়েটরি সাপ্লিমেন্ট-গ্লুকোসামিন হাইড্রোক্লোরাইড, কন্ড্রোটিন সালফেট, ক্যালসিয়াম ও হ্যালুরনিক এসিড। বয়স্ক লোকদের যেহেতু এই রোগ বেশি হয়, সেহেতু ওষুধের ব্যবহার যত কম করা যায়, ততই ভালো।
ডা. মোহাম্মদ আলী
চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল