কলেরা প্রতিরোধে কম দামি সফল টিকা
বাংলাদেশে কলেরা রোগ প্রতিরোধে ব্যাপক সাফল্য এনে দিয়েছে একটি কম দামি টিকা। চিকিত্সা বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, শুধু একটি টিকা প্রয়োগের কারণে প্রায় ৩৭ শতাংশ কলেরা রোগী সেরে উঠেছে। এমনকি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে অনেক রোগী। প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষের উপর গবেষণা চালিয়ে কলেরা প্রতিরোধের এই যুগান্তকারী ফলাফল পাওয়া গেছে বলে বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে।
গবেষকরা কলেরা প্রতিরোধের এই উদ্ভাবনকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তারা এও বলেছেন, উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা এখনো গুরুতর একটি সমস্যা। কলেরা হলে ঘন ঘন পাতলা পায়খানা ও শরীরে মাত্রাতিরিক্ত ডিহাইড্রেশন অর্থাত্ পানির অভাব দেখা দেয়। যাতে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী প্রতি বছর ৩০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়। আর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ মারা যায়। বছরের পর বছর ধরে কলেরা প্রতিরোধে টিকা ব্যবহার করা হলেও মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া দেশগুলোতে এ বিষয়ে কোন পরীক্ষা চালানো হয়নি।
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কলেরার টিকা নিয়ে পরীক্ষা চালায় আইসিডিডিআরবির গবেষকেরা। প্রতি বছর বর্ষাকালে যে এলাকায় কলেরা মহামারী আকারে দেখা দিতো সেখানে এক তৃতীয়াংশ মানুষকে কলেরা টিকা দেয়া হয় এবং সব সময় হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করার বিষয়েও সতর্ক করে দেয়া হয়।
ফলাফলে আইসিডিডিআরবির গবেষকেরা দেখেছেন ওই টিকা প্রয়োগের ফলে প্রায় ৩৭ শতাংশ মানুষ রোগ মুক্ত হয়েছেন। আর টিকা নেয়ার পাশাপাশি যারা পরিস্কার পানি ব্যবহার করেছেন সেই ক্ষেত্রে ৪৫ শতাংশ মানুষ কলেরা রোগমুক্ত হয়েছেন। কলেরায় আক্রান্ত গুরুতর ও মারাত্মক রোগীর সংখ্যাও কমেছে ৫৩ ও ৫৮ শতাংশ হারে। কলেরা প্রতিষেধক এই টিকাটির দুই ডোজের দাম মাত্র তিনশো টাকা।
আইসিডিডিআরবির প্রধান গবেষক ডা. ফেরদৌসি কাদরি বলেছেন, নিয়মিত টিকা প্রদান করলে যে কলেরা মহামারী নিয়ন্ত্রণ সম্ভব এটাই আমাদের গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ডা. মরিন ওলিরি বলেন, যেসব দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে পড়ে সেসব দেশে কলেরা একটা বড় সমস্যা। কলেরা মহামারি ঠেকানোর জন্য টিকা নেয়া অবশ্যই জরুরী। কিন্তু সেইসাথে যদি পরিস্কার পানি ব্যবহার করা পরিস্কার পরিচ্ছন থাকা হয় তাহলে এই রোগ ঠেকাতে উল্লেখযোগ্য সফলতা আসতে পারে বলে জানান ওলিরি।
সূত্রঃদৈনিক ইত্তেফাক