করোনাভাইরাস কোথায় কতক্ষণ টিকে থাকতে পারে?
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। প্রশ্ন উঠেছে, ভাইরাসটি মানবদেহের বাইরে কতক্ষণ টিকে থাকতে পারে। নতুন এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, করোনাভাইরাস বাতাসে তিন ঘণ্টা পর্য়্ন্ত টিকে থাকতে পারে ।
যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন গত মঙ্গলবার গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসক সংঘ ম্যাসাচুসেটস মেডিকেল সোসাইটি সাময়িকীটি প্রকাশ করে।
গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ২০০২–২০০৩ সালে সংক্রমণ ছড়ানো সার্স–করোনা ভাইরাস মানবদেহের বাইরে যতক্ষণ টিকে থাকতে পারে, নতুন করোনাভাইরাসটিও প্রায় ততক্ষণই টিকে থাকতে পারে। তাঁদের ভাষ্য, এই গবেষণায় একটা ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে নতুন করোনাভাইরাস; যা বৈশ্বিক মহামারি হয়ে ওঠার একটি কারণ।
গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, করোনায় সংক্রমিত একজন রোগীর হাঁচি বা কাশি থেকে ভাইরাসটি ধরতে গবেষকেরা নেবুলাইজার ব্যবহার করেছেন। এই পরীক্ষায় দেখা গেছে, ভাইরাসটি মুখ বা নাকনিঃসৃত তরলকণা বা ড্রপলেটের মাধ্যমে ”বাতাসে ছড়িয়ে পড়ার পর প্রায় তিন ঘণ্টা পর্য়্ন্ত থাকতে পারে। তামার ওপর চার ঘণ্টা টিকে থাকে । কার্ডবোর্ডের ওপর এটি টিকতে পারে ২৪ ঘণ্টা।আর প্লাস্টিক ও স্টেইনলেস স্টিলের ওপর টিকতে পারে দুই থেকে তিন দিন। ।
চীনের একদল গবেষক দেশটির হুবেই প্রদেশের উহান শহরের একটি হাসপাতালে করোনা সংক্রমিত রোগীদের ব্যবহৃত শৌচাগারে ভাইরাসটি শনাক্ত করেছেন। তাঁরা বলছেন, ভাইরাসটি বাতাসে টিকে থাকতে নিজেকে ধুলিকণার মতো সূক্ষ্ম কণায় রূপান্তরিত করে ওই সব শৌচাগারে টিকে ছিল। এ ছাড়া মলের ওপরও ভাইরাসটি পাওয়া গেছে। ওই বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ২০০৩ সালে হংকংয়ের একটি আবাসিক এলাকায় একটি পয়োনিষ্কাশন লাইন ফুটো হওয়ার পর সার্স–করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিল শতাধিক লোক। চীনের ওই গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলটিও একই ধরনের পরীক্ষা চালিয়ে নতুন করোনাভাইরাস ও সার্স–করোনাভাইরাসের তুলনা করেছে। এতে দেখা গেছে, দুই ভাইরাস একই ধরনের আচরণ করে। কিন্তু নতুন করোনাভাইরাসটি কেন এভাবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ল, দুই লাখের বেশি মানুষকে সংক্রমিত করল, তার উপযুক্ত জবাব পাওয়া যায়নি গবেষণায়। সার্স–করোনাভাইরাসের সংক্রমণে প্রায় আট হাজার মানুষ সংক্রমিত হয়েছিল, প্রাণ গিয়েছিল প্রায় ৮০০ লোকের।
এ ব্যাপারে নতুন গবেষণা নিবন্ধে লেখা হয়েছে, নতুন করোনাভাইরাসের ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার একটি কারণ হতে পারে উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই তা মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হওয়া। নিবন্ধটিতে সবার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে, নাক–মুখ–চোখ স্পর্শ না করতে, হাঁচি–কাশির সময় মুখ ঢাকতে এবং হাতের পাশাপাশি ব্যবহার্য বস্তু ও তল বারবার জীবাণুমুক্ত করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
Ref:WHO
©2014 Copyright by Micron Techno. All rights reserved.