বদভ্যাসে কিডনি বেহাল
শরীরের এই শোধন যন্ত্র ঠিক রাখতে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
এখন প্রায় সবারই জানা, শরীরের দূষিত পদার্থ বের করে দেওয়া আর শরীর সুস্থ রাখতে যে প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে হয় এর জন্য সুস্থ কিডনি প্রয়োজন।
স্বাস্থবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে কিডনির সুস্থতা বজায় রাখার জন্য অতি প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে আমাদের দৈনন্দিন কিছু অভ্যাসের বিষয় উল্লেখ করা হয়।
তবে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের শিশু কিডনি বিভাগের চিকিৎসক আনম সাইফুল হাসান বলেন, “এসব অভ্যেস কিডনির উপর প্রভাব ফেলার ক্ষেত্রে বয়স, পরিবেশ ও পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।”
পর্যাপ্ত পানি পান
কিডনির প্রধান কাজ হল রক্ত পরিশোধন করা ও শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করা। রক্তের দুষিত ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ শরীরের নানান রকম ক্ষতি সাধন করতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করলে, কিডনি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, আর তাই কিডনির ক্ষতি হয়।
ডা. হাসান বলেন, “পর্যাপ্ত পরিমাণ বলতে সবসময় সাত-আট গ্লাস বোঝাবে তা নয়। কারণ শিশুর শরীরে যে পরিমাণ পানির দরকার হয়, প্রাপ্তবয়স্কের সেই পরিমাণের চাইতে বেশি দরকার হয়।”
তিনি আরও বলেন, “মানবদেহে শতকরা ৬০ভাগ পানি। এর চেয়ে মাত্রা কম বেশি হলে শরীর খারাপ করবেই। কাজের ধরণ, সারাদিনে পানি ছাড়াও অন্যান্য পানীয় খাওয়ার পরিমাণ, বয়স ইত্যাদির উপর নির্ভর করে শরীরে কি পারিমাণ পানি প্রয়োজন হতে পারে।”
আবার যার কিডনিতে এরই মধ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তার কিডনির কার্যক্ষমতা অনুযায়ী পানি খেতে হয়। তাছাড়া এখন শীতকাল। ঠাণ্ডার সময় গরমের চাইতে পানির চাহিদা কম লাগে, জানালেন ডা. হাসান।
সময় মতো মুত্র ত্যাগ
নানান ব্যাস্ততার জন্য এমনকি অনেক সময় অলসতার কারণেও সময়মতো মূত্র ত্যাগ করেন না অনেকে। এটি কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বেশি সময় ইউরিন ব্লাডারে আটকে থাকলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পেতে থাকে।
ডা. হাসান জানান, ইউরিন একটি কালচার মিডিয়া। ফলে শরীরে এই পদার্থ বেশি থাকলে রোগসঞ্চার হওয়ার সম্ভানা থাকে।
সোডিয়াম ডায়েট
সঠিকভাবে কাজ করার জন্য মানব দেহে সোডিয়াম বা লবণের প্রয়োজন আছে। অনেকেই অতিরিক্ত লবণ খেয়ে থাকেন যা রক্তচাপ বৃদ্ধি করে ও কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করে। সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন ৫ গ্রাম লবণ খাওয়া যথেষ্ট। কারণ অতিরিক্ত লবণ গ্রহনের ফলে কিডনির ক্ষতি হয়।
কারণ হিসেবে ডা. হাসান জানান, লবণে আছে সোডিয়াম ক্লোরাইড আর টেস্টিং সল্টে আছে সোডিয়ামজাতীয় উপাদান। এগুলো শরীরে পানি ধরে রাখে। ফলে শরীর ফুলে যায়।
একটা মজার বিষয় জানান ডা. হাসান। তার কথায়, “একটা রোগের লক্ষণে নাম হচ্ছে ‘চাইনিজ রেস্ট্রুরেন্ট সিন্ড্রম”
মানে চাইনিজ খাবার সুস্বাদু করতে আমাদের দেশে বেশি পরিমাণে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হয়। তাই এই খাবার বেশি খেলে শরীর ফোলা, বমি বমি ভাব হওয়াসহ নানান রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। জানালেন এই কিডনি চিকিৎসক।
ব্যথা কমানোর ওষুধ
পেইন কিলার বা ব্যথার ওষুধ শরীরের নানান অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিশেষ করে কিডনির জন্য ক্ষতিকর। তাই ব্যথা কমানোর ওষুধ খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডা. হাসান বলেন, “মাত্র একটি পেইন কিলার ওষুধ থেকেই কিডনির বারোটা বেজে যেতে পারে।”
তিনি জানান, শোধন প্রক্রিয়া চালানোর জন্য কিডনির ভিতরে ছোট ছোট জালির মতো থাকে। ব্যথানাশক ওষুধ সেসব জালি সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই ব্যথার ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারে পরামর্শ নিতে বলেন এই শিশু কিডনি বিশেষজ্ঞ।
তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, “আর যাই হোক কোনও ভাবেই খালি পেটে পেইন কিলার খাওয়া যাবে না। আর একেবারেই না খেলে নয় এরকম পরিস্থিতিতে খাওয়া গেলেও ডাক্তারের পরামর্শে খেতে হবে।”
ক্যাফেইন
অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণের জন্য কিডনিতে ‘ক্যালসিয়াম অক্সালেট স্টোন’ নামক পাথর হয়। যা ক্রিস্টাল এবং ওক্সালেটের সমন্বয়ে তৈরি হয়। ক্যাফেইন ইউরিনারি ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি করে যা ইউরিনারি ক্যালসিয়াম অক্সিলেট পাথর সৃষ্টিতে সাহায্য করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ক্যাফেইন পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে কোন ধরনের ক্ষতি হয় না। প্রতিদিন এক-দুই কাপ কফি, তিন কাপ চা পান করা স্বাভাবিক।
তবে অবশ্যই অন্যান্য ক্যাফেইন যুক্ত খাবার যেমন- সফট ড্রিঙ্কস, এনার্জি ড্রিঙ্কস, চকোলেট ও কোকোযুক্ত খাবার পরিমাণ মতো খেতে হবে।
তাছাড়া অতিরিক্ত ক্যাফেইন যুক্ত খাবার উচ্চ রক্তচাপ তৈরি করে।
অতিরিক্ত প্রোটিন ডায়েট
সুস্বাস্থের জন্য প্রয়োজন প্রোটিন। তবে বেশি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বিশেষ করে রেড মিট কিডনির জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনির মেটাবলিক চাপ বৃদ্ধি করে যা কিডনির সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই সুস্বাস্থের জন্য রেড মিট খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া ভালো।
তবে ডা. হাসান জানান, বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে রেডমিট খাওয়ার পরিমাণ খুবই কম। তাই চিকিৎসকরা সাধারণত কিডনি রোগে ভুগছেন এরকম রোগী ছাড়া সুস্থদেহের কাউকে মাংস খেতে নিষেধ করেন না।
অ্যালকোহল ও ধূমপান
অ্যালকোহল সেবনের ফলে একজন সুস্থ মানুষও হৃদপিণ্ড, যকৃত, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
কিডনি জনিত নানান সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অ্যালকোহল গ্রহণের পরিমাণ কমাতে হবে ও পাশাপাশি তাজা খাবার গ্রহণ করতে হবে।
আর ধূমপান শরীরের প্রতিটি অঙ্গের জন্য ক্ষতিকর। ধূমপান উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী এবং উচ্চ রক্তচাপ কিডনির বিভিন্ন সমস্যার অন্যতম কারণ।
ধূমপানের জন্য রক্ত প্রবাহের গতি অনেক সময় কমে যায়। ফলে কিডনির সমস্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
ডা. হাসান বলেন, “অ্যালকোহল জিনিসটাই খারাপ। আর ধূমপান যে রোগ তৈরিতে সহায়তা করে। তাই শুধু কিডনি নয়, সুস্থ থাকতে এসব থেকে একশত হাত দূরে থাকতে হবে।”
REF:24bdnews
অ্যাজমা
অ্যাজমা কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। এটা ফুসফুসের একটা রোগ যার কারণে শ্বাসনালী কোনো কোনো উত্তেজক পদার্থের সংস্পর্শে এলে অতি সংবেদনশীল হয়ে বায়ু প্রবাহের বাধার সৃষ্টি করে। ফলে, কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং বুকে চাপ অনুভূত হয়। অ্যাজমার মূল কারণ এখনো জানা যায়নি। কোন কোন ক্ষেত্রে এটা বংশগত হতে পারে। তবে কিছু উত্তেজক পদার্থ আছে যার সংস্পর্শে এলে অ্যাজমার উপসর্গ বেড়ে যায়। যেমন- ফুলের রেণু, পাখির পালক, পশুর লোম, কার্পেটের পশম, সিগারেটের ধোঁয়া, যানবাহনের ধোঁয়া, ঠান্ডা বাতাস, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ, কিছু কিছু খাবার যেমন- গরম্নর গোমত, হাঁসের ডিম, চিংড়ি মাছ, শ্বাসনালীতে ইনফেকশন, মানসিক দুশ্চিমত্মা, বেদনানাশক ঔষুধ ইত্যাদি।
অ্যাজমার লক্ষণ: কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ অনুভব করা, হাঁচি ইত্যাদি। অনেকে কোনো শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন না, শুধু কাশি হয়, এমনকি কাশিতে রাতে ঘুম ভেঙে যায়-Cough variant asthma.
কেউ কেউ শুধু শীত বা গ্রীষ্মকালে কামি বা শ^াসকষ্ট অনুভব করে- Seasonal asthma.
কোনো কোন শিশু খেলাধূলা করার সময় কাশি বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করে- Exercise induced asthma.
অনেকে কোনো বিশেষ ধরনের ঔষুধ খেলে কাশি বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করে- Occupational asthma.
অ্যাজমার প্রতিকার: প্রশামিত্ম ভরা শ্বাস, আমাদের প্রয়াস। অ্যাজমা চিকিৎসার মূলমন্ত্র- শিক্ষা, সতর্কতা, চিকিৎসা। অ্যাজমা সম্পূর্ণ ভালো হয় না, তবে নিয়মিত এবং পরিমিত ঔষুধ সেবন করলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অ্যাজমা প্রতিরোধ করতে হলে যেসব বস্ত্তর সংস্পর্শে এরে অ্যাজমার উপসর্গ বেড়ে যায়, সেস বস্ত্ত পরিত্যাগ করতে হবে। যেমন- ধুলাবালুর সংস্পর্শে না আসা, অ্যালার্জি হয় এরকম খাবার না খাওয়া ইত্যাদি। অ্যাজমা চিকিৎসায় আমরা সাধারণত তিন ধরনের ঔষুধ ব্যবহার করে থাকি। যেমন- প্রশমনকারী ঔষুধ (Reliever drug), প্রতিরোধকারী ঔষুধ (Preventor drug), প্রতিকারকারী ঔষুধ (Protector drug)। যদি কেউ দীর্ঘ দিন যাবৎ প্রতিরোধকারী ঔষুধ সেবন করে (২-৫ বছর), তাহলে ৬০% - ৮০% শিশু এবং ২০% - ৩% বয়স্ক লোক ভালো হতে পারে। তবে কে ভালো হবে এবং কে ভালো হবে না তা আগে থেকে বলা যাবে ন।
কিশোরী মাতৃত্ব পরিণতি ও প্রতিকার
সুগন্ধি শৈশব ছাড়িয়ে ১০-১৪ বছর বয়সে একজন নাবালিকা সাবালিকা বা কৈশরে তথা জীবনের এক গুরম্নত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষনে উপস্থিত হয়। যখন তার শরীরে মনে, মননে, মননশীলতায় নানা রকম পরিবর্তন সাধিত হয়। হঠাৎ রজঃস্রাবে সে যেমন আতঙ্কিত হয়ে ওঠে, তেমনি হঠ্যাৎ বেড়ে উঠা
©2014 Copyright by Micron Techno. All rights reserved.