সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যে এইচআইভি পরীক্ষা চলছে
১০টি সরকারি হাসপাতালে এইচআইভি শনাক্ত করতে বিনা মূল্যে রক্ত পরীক্ষাকেন্দ্র চালু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, খুব বেশি মানুষ এসব কেন্দ্রে এসে রক্ত পরীক্ষা করাচ্ছে না। এই বিশেষ সেবার কথা জানে না বলে মানুষ এসব কেন্দ্রে আসছে না।
সরকারের জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচি কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, এইচআইভি শনাক্ত করার জন্য সরকারি অর্থায়নে ২০টি কেন্দ্রে রক্ত পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে মে মাস থেকে। ইতিমধ্যে ১৮টি কেন্দ্র চালু হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি চালু হয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে। বাকিগুলো এনজিও কার্যালয়ে।
এ ব্যাপারে জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির উপব্যবস্থাপক আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি হাসপাতালে এইচআইভি পরীক্ষা হচ্ছে, এটা অনেকেরই জানা নেই। তাই মানুষ কম আসছে।
একাধিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচি ও সংশ্লিষ্ট তিনটি এনজিওতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মে মাস থেকে নভেম্বরের ২৭ তারিখ পর্যন্ত ১০টি সরকারি হাসপাতালে ৫২৬ জন রক্ত পরীক্ষা করিয়েছেন। অর্থাৎ একটি হাসপাতালে মাসে গড়ে ১০ জন মানুষ সেবা নিতে আসছে। অনেকে বলেছেন, সংখ্যাটি অনেক কম।
সরকারি হিসাবে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে এইচআইভি/এইডস রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ২৪১ জন। এ পর্যন্ত এইডসে আক্রান্ত মানুষ শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ২৯৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ৪৭২ জন। দেশে এইচআইভি/এইডসের প্রকোপ খুবই নিম্নপর্যায়ে। তবে গত সপ্তাহে জাতিসংঘের এইডসবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইডস তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে এইচআইভি/এইডসের প্রকোপ কম হলেও সংক্রমণ থেমে নেই। এ খাতে আন্তর্জাতিক অর্থ-সহায়তা কমে যাওয়ায় দেশটি এখনো ঝুঁকির মধ্যে আছে।
এর আগে সাধারণ মানুষ এইচআইভির পরীক্ষা করাতেন বিভিন্ন এনজিওতে। গ্লোবাল ফান্ডের অর্থ-সহায়তার কারণে এনজিওগুলো বিনা মূল্যে এই সেবা দিতে পারত। সরকারি ও বেসরকারি সূত্র জানিয়েছে, এইচআইভি/এইডস খাতে গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়ন কমে যাচ্ছে। তাই সরকার নিজের অর্থে এইচআইভি/এইডস খাতে কাজ শুরু করেছে।
ইতিমধ্যে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই কেন্দ্র চালু হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতাল এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ সেবা পাওয়া যাচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খুব শিগগির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এই কেন্দ্র চালু হবে। সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রগুলো চালু হলেও এগুলো পরিচালনা করছে আশার আলো সোসাইটি, মুক্ত আকাশ বাংলাদেশ এবং ক্যাপ নামের তিনটি এনজিও। প্রতিটি কেন্দ্রে এদের তিনজন করে কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘এইচআইভি/এইডস পরীক্ষা ও সেবাকেন্দ্র’ চালু হয়েছে মেডিসিন বহির্বিভাগে। গতকাল শনিবার সকালে ওই কেন্দ্রে গিয়ে কথা হয় আশার আলো সোসাইটির পরামর্শক ও প্রশাসক সাবিহা ইয়াসমিনের সঙ্গে। তিনি জানান, এইচআইভি শনাক্তের জন্য এ পর্যন্ত ৩৫ জন এই কেন্দ্রে রক্ত পরীক্ষা করিয়েছেন। এঁদের মধ্যে ব্যবসায়ী, ছাত্র, পরিবহনশ্রমিক, শিক্ষক, কৃষক, প্রবাসী শ্রমিক, পোশাকশ্রমিক আছেন।
তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে কেউ এই কেন্দ্রে এসে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে জেনে যেতে পারেন তিনি এইচআইভি সংক্রমিত কি না। রক্ত দেওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল জানানো হয়। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যক্তির পরিচয় গোপন রাখা হয়।
আশার আলো সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক হাবিবা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে এইচআইভির পরীক্ষা হচ্ছে, এটা বেশি মানুষকে জানাতে হবে। অন্যদিকে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অনেক সময় এইচআইভির সংক্রমণের ব্যাপারে কাউকে কাউকে সন্দেহ করেন। এ রকম সন্দেহ হলেই ওই ব্যক্তিদের এই কেন্দ্রে রক্ত পরীক্ষার জন্য পাঠাতে পারেন।
REF:DPA