বিশ্বজুড়ে মহামারীতে রূপ নিয়েছে ডায়াবেটিস। সারা পৃথিবীতে অন্তত ৪০ কোটির মতো মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। আমাদের দেশেও প্রতি বছর লাখ খানেক মানুষ নতুন করে এ দলে যুক্ত হচ্ছে। তবে সংখ্যার চেয়ে বড় শঙ্কা হল এ রোগ সম্পর্কে অজ্ঞতা। বর্তমানে দেশে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ৮৪ লাখের ৩০ লাখেই জানে না তারা এ ব্যাধিতে আক্রান্ত। ফলে তারা নিভৃতে এ রোগ বহন করছেন। চোখ-কিডনি নষ্ট কিংবা প্যারালাইজড হওয়ার পর টের পাচ্ছেন কি ভুলের মধ্যেই ছিলেন। অথচ একটু সচেতনতা ও নিয়মানুবর্তিতা বাঁচিয়ে দিতে পারে হাজারো মানুষের জীবন।
ডায়াবেটিস দুই ধরনের হয়। এর মধ্যে টাইপ-২ সবচেয়ে মারাত্মক। এর কারণে পরবর্তীতে হৃদপিণ্ড, যকৃত, পা ও চোখের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। পরিমিত ডায়েট গ্রহণ ও ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকলে অবশ্য এ দুর্গতি সাথে নিয়েও সুস্থ জীবন-যাপন করা যায়। এ জন্য ভারতীয় পুষ্টিবিদ জাহ্নভি চিতালিয়ার কিছু উপকারি পরামর্শ মেনে চলতে পারেন। তার মতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে,
– নিয়মিত নির্দিষ্ট বিরতিতে খাবার গ্রহণ করা উচিত। এতে শরীরে শর্করার মাত্রা নির্দিষ্ট থাকবে।
– সাধারণ শর্করাযুক্ত খাবারের পরিবর্তে (যেমন-ভাত, আটার রুটি, সাদা পাস্তা, ময়দা) জটিল শর্করাযুক্ত খাবার ছাতু, ভুট্টা, কাউন, গম শর্করা নিয়ন্ত্রণে বেশি কার্যকর। তাই এসব খাবারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
– প্রতিদিন অন্তত একবেলা খাওয়া কম শর্করাযুক্ত খাবার যেমন- শাকসবজি, সালাদ, ডিমের সাদা অংশ, ননীমুক্ত পনির খাওয়া উচিত।
– সাধারণ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার (ননীমুক্ত দুধজাতীয় খাবার, মুরগি, মাছ, ডিমের সাদা অংশ, আঁশ সমৃদ্ধ প্রোটিন (শাকসবজি, ফলমূল, সালাদ) বা ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ (মাছ, শস্যবীজ, আখরোট) খাবার পরিপাক পক্রিয়ায় সহায়তা করে। তাই প্রতিদিনের মেন্যুতে এসব খাবার যুক্ত করুন।
– নিয়মিত ব্যায়াম ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমিয়ে আনে। তাই সপ্তাহের ৫ দিন অন্তত ৪৫ মিনিট করে হাঁটা উচিত।
– প্রতিদিন ১ চা চামচ মেথি বা ঢেড়সের জুস, ১ চা চামচ দারুচিনি, এক গ্লাস করলার জুস বাসায় তৈরি করে খেতে পারেন। কয়েকদিন পর উপকার নিজেই টের পাবেন।
– চিকিৎসকের পরামর্শে ক্রোমিয়াম পিকোলিনেট নামে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে। এটি শরীরের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করবে।
– প্রতিদিন যা খাবার গ্রহণ করছেন তা শরীরের শর্করার পরিমাণে কেমন প্রভাব ফেলছে তা জানতে নিয়মিত শরীরের গ্লুকোজ পরীক্ষা করুন।
– ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে ভাল উপায় ওজন নিয়ন্ত্রণ। তাই নিয়মিত ওজন মাপুন।
ডায়াবেটিস ঠেকাতেও এসব পরামর্শ বেশ কার্যকর। তাই আক্রান্ত হওয়ার আগেও এসব পরামর্শ মেনে চলা উচিত। কেননা, ডায়াবেটিস দেশে যেভাবে ছড়াচ্ছে তাতে ২০ বছর পরে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা সোয়া কোটিতে পৌঁছাবে। বলার অপেক্ষা থাকে না যে, এখনই সচেতন না হলে আগামীতে এ রোগ জাতীয় দুর্যোগে পরিণত হতে পারে।
Ref DVK
©2014 Copyright by Micron Techno. All rights reserved.